অশ্লেষা চৌধুরী: মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যুর আঁচে উত্তাল বঙ্গ, ক্ষোভে ফেটে পড়ল ছাত্র যুব সমাজ। পুলিশের সাথে ব্যাপক ধস্তাধস্তি, রীতি মতো মারধর ও সেইসাথেই ছিঁড়ে দেওয়া হল পুলিশের উর্দি। তুমুল উত্তেজনা মৌলালি চত্বরে।গত ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ১০টি বামপন্থী ছাত্র যুব সংগঠনের ডাকে নবান্ন চলো কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে এসেছিলেন মইদুল। এলাকায় তিনি ফরিদ নামে পরিচিত। পুলিশের তরফে বাম যুব কর্মীদের আটকানোর জন্য ব্যারিকেড তৈরি করে। এমনকি যথেচ্ছ লাঠিচার্জ, জলকামান, কাঁদানে সেল ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। আর ঐ ঘটনায় আরও অনেকের সঙ্গে গুরুতর আহত হন মইদুল ইসলাম মিদ্যাও। তাঁকে ডাক্তার ফুয়াদ হালিমের অধীনে নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়েছিল। রবিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাঁকে লাইফলাইন নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। আর মৃত্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র যুবরা।
এদিন সকালেই বাম ছাত্র-যুবরা ঘোষণা করেছিল বিকেলে রাজ্য দফতরে মৃত মইদুল ইসলাম মিদ্যার দেহ আনা হবে। কলকাতা ও সংলগ্ন জেলার কর্মীদের সেখানে আসার ডাক দিয়েছিল এসএফআই, ডিওয়াইএফআই। দুপুর থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে এজেসি বোস রোডে দীনেশ মজুমদার ভবনে। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বামকর্মীরা।
কলকাতা পুলিশের এক কর্মীকে তাড়া করতে করতে একটি গলির মধ্যে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে একদল ছেলে। তাঁর উর্দি ছিড়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ। কোনও রকমে পুলিশ কর্মীকে ওই দঙ্গলের মধ্যে থেকে বের করে আনেন এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। মৌলালিতে ইতিমধ্যেই পথ অবরোধ শুরু করেছে বামেরা।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ খবর মেলে, মইদুল ইসলাম মিদ্যার দেহের ময়ান্তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। মহম্মদ আলি পার্কের কলকাতা পুলিশ মর্গ থেকে তাঁর দেহ আনা হবে এজেসি বোস রোডে ডিওয়াইএফআই রাজ্য অফিসে। মর্গে উপস্থিত রয়েছেন সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমের মতো শীর্ষ বাম নেতৃত্ব।
এদিকে মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যুর খবরে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়েছে তাঁর পরিবারের ওপর। পেশায় টোটোচালক মইদুল ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। তাঁর অবর্তমানে তাঁর পরিবারে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে। একমাত্র রোজগেরে সদস্যকে হারিয়ে যেন অকুল পাথারে পড়েছে মইদুল ইসলাম মিদ্যার পরিবার। এই অবস্থায় কিভাবে সংসার চলবে ভেবে পাচ্ছেননা কেউই।
ডিওয়াইএফআই নেতা ধনঞ্জয় বেজ বলেন, বাম ছাত্র যুব সংগঠন গুলির ডাকে নবান্ন অভিযানে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশী অত্যাচারে তার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় যুক্ত পুলিশ কর্মীদের শাস্তির দাবি তারা দলের পক্ষ থেকে জানাচ্ছেন। মইদুলের মৃত্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। এক তরতাজা যুবককে ‘খুন’ করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন সুজন। বাম নেতা ও চিকিতসক ফুয়াদ হালিম দাবি করেছেন, দেহে লাঠির আঘাতের চিহ্ন ছিল। লাঠির আঘাতের জেরেই এই ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।