নিজস্ব সংবাদদাতা: স্পিড বোটের মধ্যেই এক NDRF জওয়ানের পা ছুঁতে গেছিলেন সুভাষ চন্দ্র পন্ডিত। এখনও নাড়ি শুকোয়নি তাঁর সন্তানের! তার আগেই মা আর নবজাতকের জন্য মৃত্যুর ফরমান নিয়ে হাজির কালান্তক বন্যা। আর ঘন্টা চারকে বড়জোর। তার আগেই হাজির হয়েছিলেন কমলা রঙের পোষাক পরা ফরিস্তা বা দেবদূতের দল। মা ছেলেকে বাঁচিয়ে নিয়েছেন তাঁরাই। সুভাষ তাই একবার পা ছুঁতে চেয়েছিলেন তাঁদের। যদিও তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে NDRF কমান্ডার বলেছেন, আমরা তোমাদের সেবক, জাতির সেবক।
বন্যার ভ্রুকুটির মধ্যেও যখন নেতা মন্ত্রী কিংবা দলীয় কর্মীদের ‘কালার ফটোসেশন’ চলছে। যখন কোমরে প্রায় সাংবাদিক আর চিত্র সাংবাদিক বেঁধেই চলছে ত্রাণ কার্য তখন ব্যতিক্রম NDRF জওয়ানরা উদ্ধার আর ত্রাণকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন নীরবে। কচিৎ কদাচিৎ উঠে আসছে সেরকমই দু-একটা ছবি। সেরকমই এক ছবির স্বাক্ষী রইল সুভাষ আর শ্যামাশ্রী পন্ডিতের নবজাতক। চারিদিকে জল আর জলের মধ্যেই সোমবার সকালের লাল সূর্য দেখা এক নবজাতকের।
শুধু তাই নয় আরও খবর পাওয়া গেছে যে আরও এক শিশুর জন্ম দিতে যাওয়া মা খাতুন বেগমকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। হয়ত দু’একদিনের মধ্যে তিনিও প্রসব করবেন। বন্যা বিপর্যস্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থেকে শুরু করে হুগলির খানাকুল এভাবে গত চারদিন লড়ে যাচ্ছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (NDRF) জওয়ানরা। রাতদিন স্পিড বোট নিয়ে একের পর এক আর্তের খোঁজ আসলেই উদ্ধারের জন্য ছুটে যাচ্ছেন এই বাহিনীর জওয়ানরা।
হুগলির খানাকুলের ঠাকুরানীচক গ্রামপঞ্চায়েত অধীন কেশরপদ কাঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ জানিয়েছেন, “আমাদের ঘরবাড়ি কিছুই অবশিষ্ট নেই। রবিবার দুপুরের পর থেকে বাড়ির মধ্যে হাঁটু জল হয়ে গেছিল। তারপর সন্ধ্যা থেকে কোমরজল। কোনও রকমে মাচার মধ্যে রেখেছিলাম আমার স্ত্রী এবং সন্তানকে। কিন্তু রাত ২টার পর জল বেড়ে ওই সেই মাচাও নড়বড়ে হয়ে পড়ে। আমরা উঠে যাই পাশের একটা উঁচু জায়গায়। এরপর হয়ত জীবন বাঁচাতে বাচ্চাকে নিয়েই আমাদের সাঁতরে বেরুতে হত।”
সুভাষ বলেন “কিন্তু আমার স্ত্রী কয়েকঘন্টা আগেই প্রসব করেছে ফলে সে সাঁতার কাটতে পারবে কিনা সন্দেহ ছিল। আমরা পঞ্চায়েতকে জানিয়েছিলাম। পঞ্চায়েত আমাদের বলেছিল ওরা আসছে বলে। কিন্তু আমরা আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারছিলাম না, অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছিল। নৌকাও পাওয়া যাচ্ছিলনা। ভগবানের অশেষ কৃপা সঠিক সময় ওরা পৌঁছেছিলেন।” মা ও শিশুকে ৫কিলোমিটার দুরে ঠাকুরানীচক গ্রামপঞ্চায়েত কার্যালয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন NDRF জওয়ানরা।
অন্যদিকে সোমবারই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের ভগীরথপুর থেকে এক আসন্ন প্রসবাকে উদ্ধার করে গোলসাই সুপার মার্কেটের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসেন NDRF জওয়ানরা। জানা গেছে বন্যার মধ্যেই প্রসব বেদনায় কাতর হয়ে উঠেছিলেন ফয়জুল রহমানের স্ত্রী ২১বছর বয়সী খাতুন বেগম। খবর পেয়েই স্পিড বোট নিয়ে ছুটে যান ওই জওয়ানরা। তাঁকে সুপারমার্কেটে পৌঁছে দেওয়ার পর প্রশাসনের উদ্যোগে নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। রবিবার মধ্য রাতে জল ঢুকে পড়েছিল ঘাটাল সাব জেলে। ওই দিন ভোরেই ৬১জন বন্দীকে উদ্ধার করেন NDRF জওয়ানরা। রাতদিন এভাবেই ছুটে
বন্যার্ত মানুষের ভরসা এবং ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছেন NDRF বাহিনীর জওয়ানরা।