শশাঙ্ক প্রধান: ৮ই মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, নারী শক্তির বিকাশ ও জাগরণে নারীর জন্যই উৎসর্গীকৃত দিনেই মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক কর্মরতা মহিলার। সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা এলাকায় এই মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বেলা ১০টা নাগাদ লোয়াদা-আষাড়ি রাজ্য সড়কের ওপর দাবাদাঁড়ি নামক স্থানে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলার নাম সোমা দত্ত( মন্ডল)। তাঁর বাড়ি দাসপুর থানার সরবেড়িয়া ২ গ্রামপঞ্চাতের শ্রীরামপুর গ্রামে বলে জানা গেছে। ঘটনার পরেই পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। নিহত মহিলা খড়গপুর-২ ব্লকের আইসিডিএস সুপারভাইজার। তাঁর অফিস মাদপুরে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে নিত্যদিনের মতই ওই মহিলা পেশাগত কারণেই নিজের বাড়ি থেকে স্কুটি নিয়ে বের হয়েছিলেন। বাড়ি থেকে কাঁসাই নদী পের হয়ে প্রায় ২০কিলোমিটার রাস্তা এসে আষাড়িতে বাস ধরতেন মাদপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এছাড়াও
সুপারভাইজার হওয়ার দৌলতে তাঁকে বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার ভিজিট করতে হয়। সোমবার সেকারণেই আষাঢ়ির দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। ওই সময় একটি মেশিন ট্রলি দাবাদাঁড়ি এলাকায় এক ব্যক্তির বালি খালি করে ফিরছিল। এই সময় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় দুটি যানের।
মানুষের অভিযোগ, ‘দিদিমণি রাস্তা বরাবরই দক্ষিণ দিকেই দিকে আসছিলেন কিন্তু ওই মেশিন ট্রলির চালক উত্তর অভিমুখে যাওয়ার জন্য হঠাৎই রাস্তার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে যাওয়ার জন্য রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। ফাঁকা রাস্তায় ভালো গতিতে থাকা দিদিমনির পক্ষে দ্রুত গতির নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। সরাসরি আছড়ে পড়েন ট্রলির ওপরেই।
সোমার মাথায় হেলমেট, চোখে স্নানগ্লাস ছিল কিন্ত তা স্বত্ত্বেও এড়ানো যায়নি মৃত্যু। হাফ হেলমেটের মধ্যে দিয়েই মুখমন্ডলে আঘাত লাগে তাঁর। ফলে ঘটনা স্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। দাবাদাঁড়ির স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন এই মৃত্যুর জন্য পুরোপুরি দায়ী এই বালি সরবরাহকারী মেশিন ট্রলি এবং মাটি সরবরাহকারী ট্রাক্টরের দাপট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বে-আইনি, লাইসেন্স বিহীন এই যান গুলির দাপটে অসহনীয় হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত। প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া থেকে পথ চলতি বৃদ্ধ বৃদ্ধারাও। পুলিশ, সিভিক চোখের সামনে এই বেআইনি কারবার দেখে নির্বিকার। যে কারণেই আজ মৃত্যু হল একজন কর্মরতা মহিলার।
দুর্ঘটনার পরই ট্রলি সহ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় চালক। ঘটনার পরই সংশ্লিষ্ট রাস্তা অবরোধ শুরু করে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। কয়েকশ মানুষ পথ অবরোধে সামিল হন। লোয়াদা-আষাঢ়ি সড়কে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। পথ অবরোধে সামিল হতে দেখা যায় গৃহবধূদেরও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশাল বাহিনী নিয়ে ছুটে আসে ডেবরা থানার আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় মহিলা পুলিশ। দীর্ঘ আলোচনার পর পুলিশ আধিকারিকরা জনতাকে শান্ত করে অবরোধ প্রত্যাহার করায়।
জনতাকে পুলিশ আশ্বস্ত করেছে যে, ওই চালককে অবিলম্বে খুঁজে গ্রেপ্তার করা হবে এবং বেআইনি মেশিন ট্রলির ওপর নজরদারি চালানো হবে। মহিলার স্বামী প্রসূন দত্ত দাসপুরের ব্রাহ্মনবেড়িয়া হাইস্কুলের গ্রন্থগরিক। তাঁদের একটি বছর দশকের কন্যা সন্তান রয়েছে। গোটা ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে শ্রীরামপুর গ্রামে। পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।