নিজস্ব সংবাদদাতা: দিনের পর দিন, বছরের পর বছর সীমাহীন অত্যাচার। একেক সময় মেরে আধমরা করে ফেলা রাখা হত গৃহবধূকে। এমনকি পেটানো হত নগ্ন করেও। এমন সব জায়গায় মারা হত যে লজ্জায় গৃহবধূ বলতে পারতেন না। লাগাতার সেই নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদের বাঁধ ভাঙল অবশেষে। বঁটি দিয়ে স্বামীর হাত নামিয়ে দিলেন গৃহবধূ। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার পন্ডত গ্রামের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই তৃনমূল নেতা। তাঁকে একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় গৃহবধূর পাশেই রয়েছেন আশেপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষ।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে পন্ডত গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, স্থানীয় ওই তৃনমূল নেতার নাম অরুন সামন্ত, স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে গান্ধি বলেই ডাকে যদিও গান্ধিগিরি তাঁর ধাতে ছিলনা বিশেষ করে মদ খেলে তাঁর উগ্রমূর্তি বেরিয়ে পড়ত আর হাতের সুখ মেটাতেন বউ পিটিয়ে। আর এই ঘটনা চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। মাঝে মধ্যে সেই মারের বহর এতটাই বেড়ে যেতে যে স্ত্রীকে তিন চারদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হত। সন্তানাদি বড় হলেও গান্ধি হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন অসুর হয়ে উঠেছিলেন। মারধরের মাত্রা বাড়ছিল। আরও জঘন্য ও বর্বর ওই ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে এমন ভাবে এমন জায়গায় মারধর করতেন যে যা প্রকাশ্যে দেখানো যেতনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবার ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেরা বিষয়টি নিয়ে গ্রামে এবং পঞ্চায়েতের কাছে বিচার দিয়েছে। আলাপ আলোচনা হয়েছে। সাময়িকভাবে মারধর বন্ধ করেছে অরুন কিন্তু কয়েকদিন যাওয়ার পরেই ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। পন্ডত গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, গোড়ার দিকে ভালই ছিল অরুন, এমনকি মদ না খেলে তাঁর বাহ্যিক ব্যবহার অত্যন্ত ভালো কিন্তু গত ১দশকে বদলে গেছে ছেলেটা। কিছু বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিশে এখন নিয়মিত মদ খায় আর সময়ে সময়ে বউকে মারধরের ঘটনা ঘটে। যেমনটা ঘটল মঙ্গলবার দুপুরে।
ওইদিন ফের মাতাল হয়ে বউকে পেটাতে শুরু করেন অরুন। গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, মারতে মারতেই স্ত্রীর কাপড় জামা খুলে নগ্ন করে মারার অভ্যাস ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে একদফা মারের পর স্ত্রী যখন প্রায় অসাড় হয়ে পড়েছেন তখন তাঁর কাপড় খোলার চেষ্টা করেন অরুন আর এই সময়ই নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন তাঁর স্ত্রী। পাশে থাকা একটি বঁটি তুলে নিয়ে সজোরে বসিয়ে দেন অরুনের বাঁ হাত, কব্জির ঠিক নিচেই। এক কোপেই কব্জি থেকে নিচের অংশ ঝুলে যায়। রক্তে ভেসে যায় সারা ঘর উঠোন। মুহূর্তের মধ্যেই নেশা ছুটে যায় অরুনের। বসে পড়েন কব্জি চেপে ধরে। এরপরই ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। একটি গাড়ি করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ডেবরার একটি নার্সিংহোমে। সেখানেই তাঁর একটি অপারেশন হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে স্ত্রীর শরীরেও গুরুতর আঘাত রয়েছে। বাঁশ লাঠি দিয়ে বীভৎস ভাবে মারা হয়েছিল তাঁকে। বাপের বাড়ির লোকেরা এসে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়ে ওই গৃহবধূকে শুশ্রূষা করছেন বলেই জানা গেছে। এদিকে এই ঘটনায় ওই গৃহবধূর পাশেই দাঁড়িয়েছে পন্ডত, পশ্চিম দ্বারখোলা, বগুয়ান, বাড় রাধানগর ইত্যাদি আশেপাশের গ্রামের মানুষরা। দুর্বৃত্তের উচিৎ শিক্ষা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এলাকাটি ডেবরা ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান জগন্নাথ মূলা জানিয়েছেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বহুবার ওকে এই কুঅভ্যাস থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে। বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসা হয়েছিল কিন্তু তারপরেও নিজেকে সংশোধন করেনি অরুন তারই পরিণতি এই ঘটনা।”