Homeএখন খবরDuare Sarkar: দুই অন্তঃস্বত্ত্বার মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের! 'দুয়ারে মৃত্যু' নিয়েই...

Duare Sarkar: দুই অন্তঃস্বত্ত্বার মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের! ‘দুয়ারে মৃত্যু’ নিয়েই ভাঙা বাড়িতেই চন্দ্রকোনা বিধবা

নিজস্ব সংবাদদাতা: ৩ দিনও পের হয়নি ঘাটাল মহকুমার দাসপুর থানার রাজনগরের সেই মর্মান্তিক ঘটনার। বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ায় সন্তানদের গর্ভে নিয়েই মা হওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছিল দুই জা’য়ের। সেদিন ছুটে এসেছিলেন প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। জানিয়ে গেছিলেন সমবেদনা কিন্তু সেই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা নিয়েছিল ঘাটাল মহকুমা কিংবা জেলা প্রশাসন? বোধহয় না। যদি তাই হত তবে গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েত সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হত যেন আর এরকম বিপজ্জনক বাড়িতে কেউ না থাকেন। দায়িত্ব নেওয়া হত, ওই ধরনের বাড়িতে বাস করতে বাধ্য হওয়া দরিদ্র মানুষদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার। সেই কারণেই তো প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা কিংবা বাংলার বাড়ি প্রকল্প। যদিও সরকারের প্রকল্পের সুবিধা প্রকৃত গরিব মানুষ কতটা পাচ্ছেন তা দেখতে হলে একবার ঘুরে আসতেই হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই ঘাটাল মহকুমারই চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে। যেখানে ‘দুয়ারে মৃত্যু’ নিয়ে বাড়ি ভেঙে পড়ে জীবন যন্ত্রনা থেকে মুক্তির অপেক্ষায় একজন ষাটোর্ধ্ব বিধবা মহিলা।

কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধামকুড়িয়া গ্রামের বিধবা সুলোচনা রায় এবং তাঁর ৭৫%ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িটি সৌভাগ্যবান কারন তাঁরা একের পর এক আইলা, ফনি, আমফান, যশ সহ অন্ততঃ ১০টি সাইক্লোন পেরিয়েও টিকে আছেন, বেঁচে আছেন। যেন পঞ্চায়েত আর প্রশাসন মিলে তাঁদের টিকে থাকার ক্ষমতা পরখ করে চলেছে গত প্রায় ১২বছর ধরে। এরমধ্যে বার বার তাঁর নাম উঠেছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায়। ২বার ছবিও তুলে নিয়ে গেছে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কিন্তু বাড়ি হয়নি। সুলোচন রায়ের স্বামী মারা গিয়েছেন। বড় ও মেজো ছেলে বিয়ের পর গ্রামেই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বউ নিয়ে থাকেন। মায়ের মত বাড়ি ভেঙে চাপা পড়ে মরার জন্য অপেক্ষা করার সাহস তাঁদের নেই। ছোট ছেলের এখনও বিয়ে হয়নি। তবে ভাঙা বাড়িতে মরার ভয়ে সেও থাকেনা। যেখানে সেখানে রাত কাটিয়ে দেয়।

সুলোচনা ছেলেদের শ্বশুরবাড়ি কিংবা যেখানে সেখানে রাত কাটাবেন কী করে? তাই মরার অপেক্ষায় পড়ে থাকেন। সম্বল শুধু বাম আমলে পাট্টা পাওয়া জায়গার ওপর তৈরি মাটির বাড়িটি। আইলা ঝড়ে ভেঙে পড়তে পড়তে টিকে যাওয়া ওই বিপজ্জনক বাড়িটির সামনে ও পেছনের অংশ সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্ত,ধসে পড়েছে একটি রুমও,বাকি অংশটুকুও যেকোনো দিন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু সরানোর ক্ষমতা নেই। কান্নায় ভেঙে পড়ে জানালেন, ‘রেশনের ২কেজি চালে ১মাস চলে? জব কার্ডে কাজই মেলেনা সবদিন। বাড়ি সারাবো কী করে? পঞ্চায়েত বার বার আসে আর ছবি তুলে নিয়ে যায়। তারপর নাম মুছে দেয়। বাড়ি হয়না আমার।”

বাড়ির অবস্থা এতটাই খারাপ যে
নিজের আধার,ভোটার ও রেশনকার্ড রাখতে হয় প্রতিবেশী সঞ্চিতা ঝাঁ কিংবা সুদর্শন চক্রবর্তীদের বাড়িতে। ওগুলো টিকে থাকলে মরে যাওয়ার পর অন্ততঃ সনাক্তকরনে সুবিধা হবে সরকারের। অসহায় বৃদ্ধা জানান, ” ছেলেরাও দিনমজুরি করে কোনও রকম বেঁচে রয়েছে। বাড়ি বানাতে পারেনি তারাও। একটা বাড়ির জন্য সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছি। শুধু দেখছি আর দেখব। বোধহয় ভোটের আগেই ওরা ফটো তুলে নিয়ে যায়। তারপর আর কেউ আসেনা। এখন সরকার আমার দুয়ারে মৃত্যু পাঠিয়ে রেখেছেন। নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবো। তাই পড়ে আছি, হয়ত মরার জন্যই।”

বাড়ির ছবি দেখে চমকে উঠেছেন খোদ চন্দ্রকোনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ। বলেছেন, ‘সে কী! এনার তো বাড়ি পাওয়ার কথা। কেন পাননি বলতে পারছিনা। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।” তবে তাঁর এও সাফ কথা, ” এখুনি সরকারি বাড়ি পাওয়া কঠিন। আমাদের হাতেও তেমন সুযোগ নেই। তবুও আমরা চেষ্টা করবো সবরকম সহযোগিতার। প্রয়োজন মতো খাদ্য সামগ্রী,ত্রিপল এবং আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে আগামী দিনেও করা হবে।” সুতরাং আপাততঃ দুয়ারে মৃত্যু নিয়ে সুলোচনা রায়ের হয়ে ২টি প্রশ্ন করাই যায়। প্রথমতঃ একমাত্র বাড়ির তালিকায় নাম থাকার পরই এবং বাড়ি চেয়ে আবেদন করার পরই আবেদনকারীর ছবি তোলা হয়। তাহলে তালিকায় নাম থাকা স্বত্ত্বেও সুলোচনা রায়ের বাড়ি হচ্ছেনা কেন? দ্বিতীয়ত: ছবি তোলাটা কী বাড়ির জন্যই নাকি ভোটের আগে ‘আই ওয়াশ’ ছিল?

RELATED ARTICLES

Most Popular