নিজস্ব সংবাদদাতা: এবার রাজ্যের বাড়িতে বাড়িতে পালস অক্সিমিটার পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। আর সেই কারণে বিপুল সংখ্যক পালস অক্সিমিটার কেনার জন্য গ্লোবাল টেন্ডার ডাকতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারের মনে হয়েছে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তরা বুঝতে পারছেননা যে ভেতরে ভেতরে তাঁদের অক্সিজেন ঘাটতি হচ্ছে কী না! যখন সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে তখন তাঁরা হাসপাতাল বা অন্য কোথাও যাচ্ছেন অক্সিজেনের জন্য কিন্তু ততক্ষণে বড়সড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। কখনও চূড়ান্ত সঙ্কট, কখনও আবার মৃত্যুর মত ঘটনাও ঘটছে। যদি বাড়িতে পালস অক্সিমিটার থাকে তাহলে সেটার সাহায্যে আক্রান্ত অনেক আগেই শরীরের অবস্থা বুঝতে পারবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দ্বারস্থ হতে পারবেন, এড়ানো সম্ভব হবে মৃত্যুর মত দুর্ভাগ্য জনক ঘটনা। তাই সরকার ঠিক করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর এই অক্সিমিটার পৌঁছে দেবে আক্রান্ত বা সম্ভাব্য আক্রান্তের বাড়িতে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এক অধিকর্তা বলেছেন, ‘ সমস্যাটা গ্রামেই বেশি। সুযোগ এবং সচেতনতা দুটোরই ঘাটতি রয়েছে গ্রামে যে কারনে প্রথমে গ্রাম দিয়েই শুরু করা হচ্ছে। পরে প্রয়োজন মত শহরের বস্তি এলাকা, নিম্নবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারগুলির ভাবা হতে পারে। এখন রাজ্যের ১০টি ব্লককে ভিত্তি করে এই পাইলট প্রজেক্ট শুরু করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে সমস্ত ব্লকেই।” রাজ্যের আশা প্রাপকরা যদি ঠিকঠাক এই পালস অক্সিমিটার ব্যবহার করেন তাহলে করোনায় মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে যাবে।
সরকারের একটি সূত্র জানানো হয়েছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে যাঁরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে আসছেন তাঁদের অনেকেরই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে কিন্তু রিপোর্ট পেতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হয়ত কোভিড রোগির চিকিৎসা শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। সেই পর্যায়ে তিনি তাঁর শরীরের ওপর নজরদারি করতে পারেন অক্সিমিটার দিয়ে। কিন্তু গরিব মানুষ অক্সিমিটার কেনার সামর্থ্য নেই। তাঁদের কাছে এই মহার্ঘ্য যন্ত্রটি পৌঁছে দেবে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। রেকর্ড দেখে স্থানীয় আশাকর্মী অথবা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা আক্রান্ত বা সম্ভাব্য আক্রান্তের বাড়িতে পৌঁছে যাবেন। অক্সিমিটার দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবহার বিধি ও রেকর্ড রাখার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে আসবেন হাতে কলমে। করোনা নিরাময় না হওয়া অবধি অক্সিমিটার থাকবে ওই পরিবারে। নিরাময় হওয়ার পর তা আবার ফেরৎ নিয়ে আসবেন আশাকর্মীরাই। এজন্য ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চাহিদা অনুযায়ী পালস অক্সিমিটার মজুত থাকবে।
স্বাভাবিক ভাবেই এরজন্য বিপুল সংখ্যক অক্সিমিটার প্রয়োজন যা কেনার জন্য টেন্ডার ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য হবে। জুনের গোড়াতেই যাতে পাইলট প্রকল্পে কাজ শুরু করা যায়, তার তৎপরতা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরেই হুগলি, উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং এবং জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। এই সব জেলায় প্রাথমিক ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত ২০টি শয্যা কোভিড রোগীর জন্য বরাদ্দ। গ্রামীণ ডাক্তারদেরও তালিম দিয়ে করোনা রোগীর চিকিৎসায় নামানো হচ্ছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে আশাকর্মীরা ফের বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা শুরু করেছেন। যাঁদের কোভিড উপসর্গ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা, তাঁদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা পাঠানো হচ্ছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। সেই তালিকা মিলিয়ে যেমন পালস অক্সিমিটার রোগীকে দেওয়া হবে, তেমনই ফেরত নেওয়া হবে। পাশাপাশি গ্রামীণ বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যাম্বুল্যান্স মোতায়েন রাখা হবে, যাতে গুরুতর অসুস্থকে দ্রুত জেলার কোভিড হাসপাতালে ভরতি করা যায়। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা অজয় চক্রবর্তীর কথায়,” কোভিড উপসর্গ রয়েছে কিন্তু টেস্ট রিপোর্ট আসেনি, এমন সব রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে কয়েক দিনের জন্য পালস অক্সিমিটার দেওয়া হবে। আশাকর্মীরা তাঁদের হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেবেন, কীভাবে অক্সিমিটারে আঙুল ঢুকিয়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপা যায়। উপসর্গ কমলে বা রোগী হাসপাতালে ভরতি হলে যন্ত্রটি আশা বা অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের হাতে ফেরত দিতে হবে।”