Homeএখন খবর৪ ঘন্টার টানা বৃষ্টিতে ভাসল ঘাটাল, কেশপুর ! হাজার হাজার হেক্টর জমি...

৪ ঘন্টার টানা বৃষ্টিতে ভাসল ঘাটাল, কেশপুর ! হাজার হাজার হেক্টর জমি জলের তলায়, ভেসে গেল ডেবরার ট্যাবাগেড়া ও লোয়াদার অস্থায়ী সেতু! ১০ ঘন্টা পেরিয়েও বন্দী লক্ষাধিক মানুষ

শুরু বর্ষার যন্ত্রনা! ডেবরা

নিজস্ব সংবাদদাতা: ৪ঘন্টার প্রবল বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ব্যাপক ক্ষতি ও দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। কংসাবতী নদীর ওপর দুটি অস্থায়ী সেতু ভেসে যাওয়ায় জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির চারটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। বৃষ্টিতে কার্যত ভেসে গিয়েছে কেশপুর থানা এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি তো হয়েছেই তার সঙ্গে একের পর এক পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মাছ চাষিরা।

অন্যদিকে ১০ঘন্টা পেরিয়ে গিয়েও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রবল আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন ডেবরার ভবানীপুর, ভরতপুর, মলিঘাটি এবং গোলগ্রাম গ্রামপঞ্চায়েতের ছোট বড় ৭০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। জেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় অসুখ, বিসুখ বা দুর্ঘটনায় তাঁরা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেননা।

শেষ সম্বল! কেশপুর

পশ্চিম মেদিনীপুর কৃষি দপ্তর জানিয়েছে সোমবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা অবধি ভারী বর্ষণ হয়েছে যা কার্যত ধুয়ে দিয়েছে কেশপুর, দাসপুর ও ঘাটাল থানা এলাকা। এরমধ্যে কেশপুরে জেলার সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৩৩ মিলিলিটার। দাসপুর ও ঘাটাল এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ মিলিলিটার। জেলার দক্ষিণ দিকে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় সব মিলিয়ে সারা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৩৫.৬মিলি লিটরে। জেলার কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এই বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তিল, বাদাম, মুগ এবং পাট চাষের। জেলার ৬১ হাজার কৃষিজমি জলের তলায় চলে গেছে যার মধ্যে শুধু তিল চাষ করা হয়েছিল এমন কৃষিজমির পরিমান ৫০হাজার হেক্টর। মূলতঃ এই ক্ষতি হয়েছে কেশপুর, চন্দ্রকোনা, ঘাটাল এবং দাসপুর থানা এলাকায় কারন এই এলাকাতেই তিল চাষের পরিমান অধিক।

প্রবল বৃষ্টিতে এদিন সকাল ৮টা নাগাদ কংসাবতী নদীর ওপারে থাকা ডেবরার ভরতপুর ও সত্যপুর গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যবর্তী অস্থায়ী সেতু বা ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজটি প্রথম ভেসে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ভরতপুরের দিকের অংশটি। এর কিছুক্ষন পরেই খবর পাওয়া যায় একই ভাবে ভেসে গেছে লোয়াদার কাছে অস্থায়ী সেতুটিও। এরফলে নদীর ওপারে থাকা মানুষেরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়জন দাবি করেছেন, ঘূর্ণিঝড় যশের পরেই ওপর থেকে নেমে আসা জলের স্রোতে রাস্তার নিচে থাকা কংক্রিটের পাইপ ছাপিয়ে জল উঠে এসেছিল। সেই সময়ই দুর্বল হয়ে পড়ে দুটি রাস্তাই। তখনই নজর দিলে এই অবস্থা হতনা।

চারটি গ্রামপঞ্চায়েতের মানুষদের নিয়ে গড়ে ওঠা দ্বীপান্তর মুক্তি সংগ্রামী মঞ্চের সভাপতি গৌতম মাজী জানিয়েছেন, ‘আমাদের এই দুঃখের জীবনের শেষ নেই। স্বাধীনতার পর থেকেই এই আন্দামানের জীবন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। কোনোও সরকারই এ পারের মানুষকে গুরুত্ব দেননা। এই যে দুর্ভোগ শুরু হল এটা চলবে শীতকাল আসা অবধি। এখন বারবার সেতু ভাঙবে, গড়বে। নদীতে নৌকা, গাড়ি ডুবে যাবে। এসব এখন চলতে থাকবে। এটাই আমাদের জীবন।” সেতু ভাঙার খবর পেয়েই অবশ্য এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন নবনির্বাচিত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। কথা বলে এসেছেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে।

ডেবরা পঞ্চায়েতে সমিতির সূত্রে জানা গেছে বাঁশের পাটাতন বিছিয়ে ফের অস্থায়ী সেতু বাঁধার কাজ শুরু হয়েছে। কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কাজ অবশ্য শুরু হলেও ১০ঘন্টা পেরিয়েও যুক্ত করা যায়নি দু’পারকে। আপাতত যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার জলের গতি কিছুটা কমলে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ঘাটদুটির ইজারাদারেরা।

এদিকে কেশপুরে জেলার মধ্যে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষিজমির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ চাষেরও এমনটা দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কয়েকটি গ্রামপঞ্চায়েতের পাশাপাশি এদিন সাতসকালেই জল জমে যায় কেশপুর বাজার এলাকাতেও। কেশপুরের ধলহরা, পঞ্চমী এলাকার বেশ কয়েকটি পুকুর ভেসে গিয়ে মাছ বেরিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রচুর মানুষের ঘরে জল ঢুকে পড়ায় মাটির বাড়িগুলির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular