নিজস্ব সংবাদদাতা: ৯ দিনের মাথায় প্রথম দফার ভোট। আর তার আগেই ফিরতে চলেছে বাংলায় নির্বাচনী হিংসার সেই পুরনো ছবিটাই। কদিন ধরেই চাপান উতোর চলছিল। বাড়ছিল উত্তাপ, বৃহস্পতিবার তা একলাফে বেড়ে গেল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে ঝরল রক্ত আর ঘাটালের বিজেপি প্রার্থীকে জুতো দিয়ে মারার অভিযোগ উঠল তৃনমূলের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনের এত হম্বিতম্বির পর কী শেষে বজ্র আঁটুনির সেই ফস্কা গেরোই। খোদ প্রার্থীই যেখানে আক্রন্ত সেখানে সাধারণ কর্মী আর ভোটারদের কী হবে?
বৃহস্পতিবার প্রায় দিন ভরই উত্তপ্ত থেকেছে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। রেশ অবশ্য ছিল বুধবার থেকেই। বুধবার নন্দীগ্রামে এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে পুজোর নিমন্ত্রনে গিয়ে তৃনমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। অভিযোগ বুধবার রাতেই তৃণমূলের একদল কর্মীর উপর হামলার অভিযোগ ওঠে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। একটি কর্মিসভায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে তৃণমূলের এক যুবনেতা আক্রান্ত হন। গাড়ি ভাঙচুর করার পাশাপাশি দুষ্কৃতীরা ওই তৃণমূল নেতা এবং তাঁর সঙ্গীদেরও মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটির পিছনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু ও তাঁর অনুগতদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। এর পরেই বৃহস্পতিবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে উঠল নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া এলাকা।
দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী গুরুতর জখম হন। আহতদের উদ্ধার করে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে গড়চক্রবেড়িয়াতেও গন্ডগোল হয়। দু’টি ঘটনাতেই বিজেপি অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূলের দিকে। যদিও তৃণমূল পাল্টা দাবি করেছে, বিজেপি-র মারে তাদের দলেরই কয়েকজন আহত হয়েছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘এলাকায় উত্তেজনা ছড়াতে আসছেন শুভেন্দু। তাঁর দলবলই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উপরে প্রথমে হামলা চালায়।’’ মার এবং পাল্টা মারের ঘটনায় রক্ত ঝরছে দু’পক্ষই।
ঘটনার খবর পেয়েই সোনাচূড়ায় পৌঁছন শুভেন্দু। সেখানে কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘‘এসব পেঁচি মস্তানদের ভয় পাবেন না। বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের বাড়িতে ডাকুন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্ভয়ে ভোট দিতে যাবেন।’’ পরে গড়চক্রবেড়িয়ায় গন্ডগোলের পর তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলরাজ চলছে। আমি পর্যবেক্ষকদের জানাব।’’
এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল বিধানসভাতে বিজেপি প্রার্থীকে আক্রমনের অভিযোগ ওঠে তৃনমূলের বিরুদ্ধে। ঘাটালের ৮ নম্বর অঞ্চলের কোতুলপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার প্রচারে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী শীতল কপাট। অভিযোগ, তাঁর প্রচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী–সমর্থকেরা। এই নিয়ে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে বচসা বাধে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী–সমর্থকদের। তার জেরে পরিস্থিতি হাতাহাতিতে পৌঁছয়। মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। তারপরই আক্রান্ত হয়েছেন শীতল কপাট। হামলার ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে।
শীতল কপাটকে প্রচারে বাধা দেওয়া হলে প্রতিবাদ করেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজেপি কর্মীরা। এখান থেকেই বচসার সূত্রপাত। তারপর বচসা থেকে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়। অভিযোগ, বিজেপির প্রার্থীকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় জুতোও। এমনকী, হাতাহাতিতে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীর মাথাও ফেটেছে বলে খবর। তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিরাট পুলিশ বাহিনী। হামলার জেরে আহত হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শীতল কপাট। তাঁকে জুতো পেটা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
যদিও বিজেপির তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা যুক্ত, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ঘাটাল থানার পুলিশ। সেখান থেকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে জমায়েত। হামলার প্রতিবাদে আজ বিকেলে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সব জায়গায় পথ অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা। যদিও নন্দীগ্রাম থেকে ঘাটাল কোথাও দেখা মেলেনি কেন্দ্রীয়বাহিনীর। স্বাভাবিক ভাবেই ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে এলাকা জুড়ে।