নিজস্ব সংবাদদাতা: ধর্ষণ আর নারী নির্যাতনে ইতিমধ্যেই শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে রাজ্য। লাভ জেহাদ কিংবা আ্যন্টি রোমিও স্কোয়াড আদতে নারীকে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ারই একটি মরিয়া প্রচেষ্টা আর এই প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি মদত। নারীকে পশ্চাদপদ রাখার বেপরোয়া ভাব কতটা ছড়িয়েছে তারই একটি নজির দেখা গেল যোগী রাজ্যে। স্রেফ জিনস্ পরার অপরাধে এক কিশোরীকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল পরিবারের লোকেদেরই বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে দেওরিয়া জেলার সাবরেজি খড়গ গ্রামে। ১৭বছরের ওই কিশোরীর নাম নেহা পাশওয়ান। বাবার সঙ্গে বেশ কিছুদিন লুধিয়ানায় থাকত নেহা। লকডাউনে কাজ হারিয়েছিল বাবা। তারপর তারা গ্রামে ফিরে আসে। সেখানে ছোট থেকেই আধুনিক পোশাকে অভ্যস্ত ও স্বছন্দ ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, তার শহুরে পোশাক পছন্দ ছিল না বাড়ির লোকেদের। জিনস, টপ কিংবা ট্রাউজারেই স্বচ্ছন্দ কিশোরীকে তার কাকা ও ঠাকুরদা ভর্ৎসনা করত। এই ধরনের পোশাক সে যেন আর না পরে, এমনই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কোনও হুমকিকেই পাত্তা দিত না ওই কিশোরী। গত সোমবারও এই নিয়ে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়েছিল। তারপরও বৃহস্পতিবার জিনস পরতে দেখা যায় ওই কিশোরীকে। এরপরই তাকে বেধড়ক মারধর করে তার ঠাকুরদা ও অন্যরা। মেয়েটির মা জানিয়েছেন, মেয়ের মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং যতক্ষন না সে জ্ঞান হারায় ততক্ষন তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে যাচ্ছিল তার ঠাকুরদা ও কাকা সহ কয়েকজন। প্রথম গন্ডগোলের সূত্রপাত হয় সোমবার। যখন জিনস্ পরার জন্য মেয়েটিকে বকাবকি করেছিল তার ঠাকুরদা। এরপর বৃহস্পতিবার ফের মেয়েটি জিনস্ ও টপ পরলে শুরু হয় মার।
মারের চোটে কিশোরী অচেতন হয়ে পড়লে একটি অটোতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় দেওরিয়া-কাশবা জাতীয় সড়কে অবস্থিত পাটনবা সেতুর ওপর। সেখান থেকে ছুঁড়ে দেহটি নদীতে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয় কিন্তু সেতুর একটি রেলিংয়ে আটকে যায় দেহটি যা পরে পুলিশ উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় শহরের সার্কেল ইন্সপেক্টর যশ ত্রিপাঠী। ময়নাতদন্তেও মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মেয়েটির ছোট ভাই বিবেক জানিয়েছে, আমার ঠাকুরদা দিদির জিনস্ পরা নিয়ে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ছিল। এবং তাকে মারধরের সময় তার পোশাক রুচি নিয়ে বারবার গালাগালি করছিল। মেয়েটির মা তার শ্বশুর শাশুড়ি সহ মোট ১০জনের নামে এফ.আই.আর করেছেন। যার ভিত্তিতে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২(হত্যা) এবং ২০১(প্রমান লোপের চেষ্টা) ধারায় মামলা দায়ের করেছে বলে জানিয়েছেন মহুয়াদিন থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক। মেয়েটির ঠাকুরদা,ঠাকুমা, অটো চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।