Homeএখন খবরলকডাউন এড়াতে চাইলে করোনা বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলুন; রাজ্যবাসীকে চরম হুঁশিয়ারি...

লকডাউন এড়াতে চাইলে করোনা বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলুন; রাজ্যবাসীকে চরম হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

সুস্মিতা গোস্বামী: আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে যদি করোনার ক্রমবর্ধমান মামলা হ্রাস না পায়, তবে সারা রাজ্য জুড়ে পূর্ণ লকডাউন জারি করার হুঁশিয়ারি দিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। রাজ্যে বাড়তে থাকা করোনা পরিস্থিতিএ ওপর ভিত্তি করেই তিনি রবিবার এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ভার্চুয়াল একটি বৈঠকে তিনি বলেন যে, প্রতিদিনের পরিসংখ্যানে সংক্রমণের এই অভ্যুত্থান করোনার তাজা তরঙ্গ কিনা, তা বিচার করতে ৮-১৫ দিন লেগে যাবে। সেইসাথেই তিনি রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে এও বলেন যে, যদি লকডাউন এড়াতে চান তবে করোনাভাইরাসের জন্য জারি করা কঠোর প্রটোকল মেনে চলুন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কী লকডাউন প্রয়োজন হবে? আপনারা যদি দায়িত্বশীলের মতন আচরণ করেন তবে আমরা আগামী ৮ দিনের ভেতর তার ফল পেয়ে যাব। যারা যারা পুনরায় লকডাউন না চান, তারা অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। আর যারা লকডাউন চান, তারা মাস্ক পড়বেন না। তাই মাস্ক পড়ুন ও লকডাউনকে না বলুন। তিনি আরও বলেন, “এটি করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ হোক বা না হোক, আসন্ন ৮ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আমরা এটি বুঝতে পারব।”

দীর্ঘ তিন মাস সুপ্ত অবস্থায় থাকার পর দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি করোনার মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ৬,০০০-এর বেশি করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। রবিবার রাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্ত হয়েছে, যার সংখ্যা ৬,৯৭১ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। রাজ্যের রাজধানী মুম্বাইতেই কেবলমাত্র ৯২১ জন আক্রান্তের হদিশ পাওয়া গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে চিন্তার সাথে বলেন, “রাজ্যে ক্রমেই করোনা পরিস্থিতি ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। যেখানে রাজ্যে প্রতিদিন প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ আক্রান্তের ঘটনা প্রকাশ্যে আসত, সেখানে এখন ৭০০০ সক্রিয় মামলার সন্ধান মিলছে। সক্রিয় মামলা ৪০,০০০ থেকে লাফিয়ে একেবারে ৫৩,০০০ এ পৌঁছে গিয়েছে। গত বছরেও আমাদের রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল, এখনও প্রায় আগের কাছাকাছি পরিস্থিতিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি।“ “পুনরায় যদি সেই পরিস্থিতি ফিরে আসে, কী হবে ভাবুন তো?” উদ্বেগের সাথে তিনি প্রশ্ন করেন।

“যদি একই ভাবে আগামী ৮-১৫ দিন এই পরিসংখ্যান বাড়তে থাকে তবে লকডাউন জারি করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না,” তিনি যোগ করেন।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জেলায় বাড়তে থাকা সংক্রমণে রাশ টানতে সবরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করার অনুমতি দিতে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ জেলাগুলি যেমন অমরাবতী, আকোলা, এবং একাধিক জায়গায় এক দিনের সুযোগ দিয়ে লকডাউন বা যা কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার, তা নিতে বলা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সামাজিক যে কোনও অনুষ্ঠান, যেখানে বেশি জন সমাবেশ হয়, সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে।

তিনি বলেন, “উপস্থিত সকলকেই আমি আদেশ দিচ্ছি যে আগামীকালের অনুষ্ঠানের পরে, সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় যে কোনও অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে কিছুদিনের জন্য। মনে রাখবেন, আপনি এক্ষেত্রে নিজের প্রচার বা আনন্দের জন্য মিলিত হবেন, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে নয়।“

মহারাষ্ট্র সরকার রবিবার জানিয়েছে যে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য অমরাবতী জেলাকে লকডাউনের আওতায় রাখা হয়েছে। আর অমরাবতীতে লকডাউন ঘোষণার পর পরেই পুণে জেলা প্রশাসনও ২৮ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করার ঘোষণা করেছে। মহারাষ্ট্রের কোভিড-১৯ টাস্কফোর্সের সদস্য ডঃ শশাঙ্ক যোশী সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, করোনার ২,৪০ টি নতুন স্ট্রেইন সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, যার দরুন গত সপ্তাহের পর থেকে সংক্রমণের পরিমাণ বেড়েছে অনেকটাই।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী শিথিল করাতেই করোনা এইভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বি জে মেডিকেল কলেজের ডিন ডঃ মুরলিধর তাম্বি এবং সাসসুন জেনারেল হাসপাতালের সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, ছোট ছোট বিষয়গুলি নিয়ে অবহেলা, সমাবেশ, বিবাহ অনুষ্ঠান এবং শারীরিক দূরত্ব বিধি অনুসরন না করাই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ। এছাড়াও মহারাষ্ট্রে এইভাবে হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য মূলত দুটি কারণকে দায়ী করা হচ্ছে; মুম্বাই লোকাল ট্রেনগুলি পুনরায় চালু করা এবং আকোলা, সাতারা, অমরাবতী প্রভৃতি জেলাগুলিতে পাওয়া মিউট্যান্ট স্ট্রেইন।

RELATED ARTICLES

Most Popular