অশ্লেষা চৌধুরী: কমিশনে নজরে এবার আরও দুই বিজেপি নেতা; দিলীপ ঘোষে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা, পাশাপাশি সায়ন্তন বসুকেও শোকজ নোটিস কমিশনের। বৃহস্পতিবার খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে নির্বাচন কমিশন এই দুই সিদ্ধান্ত নেয়।
শীতলকুচি কাণ্ডে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বৃহস্পতিবার বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুকে শোকজ নোটিস ধরালো কমিশন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর কাছে জবাব কমিশন। কমিশনের চিঠিতে উল্লেখ, শীতলকুচি নিয়ে সায়ন্তন সংবাদ মাধ্যমের সামনে এমন কিছু মন্তব্য করেছিলেন যা নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে। চতুর্থ দফা ভোটের দিন শীতলকুচিতে ৫/১২৬ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। একদিকে আমিত শাহকে কাঠগড়ায় তোলেন মমতা, অন্যদিকে বিজেপি নেতারা মমতার উস্কানিমূলক মন্তব্যকে এর জন্য দায়ী করে। কিন্তু মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, সায়ন্তন বসু-বিজেপি নেতারা একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করতে থাকেন। জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে বলেও হুমকি দেন।
এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্ত বলেছিলেন, “আমি সায়ন্তন বসু বলে যাচ্ছি, বেশি খেলার চেষ্টা করবেন না। আমরা তাহলে শীতলকুচির খেলা খেলব।“ এমনকি একদিন আগেও মালদায় দলীয় প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর সমর্থনের সভা করতে এসে তিনি বলেন, “যারা এখন শুয়ে আছে তারা যদি উঠে দাঁড়িয়ে খেলা দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে এমন অবস্থা হবে যে, ২৯ তারিখের পরে খেলা তো দূরের কথা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকবে না। তার প্রমাণ আমাদের সুরক্ষা বল দেবে। কারণ তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে ভোট করানো।” আর এইভাবে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে কমিশনের কোপ পড়ল সায়ন্তনের দিকে। তাঁকে নোটিস দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হল, অন্যথায় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
অপরদিকে একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দিলীপ ঘোষের প্রচারে ২৪ ঘন্তা নিষেধাজ্ঞা জারি করে কমিশন। এর আগে মঙ্গলবারেই দিলীপ ঘোষকে শোকজ নোটিস দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। দিলীপ ঘোষ সেই সময় জানিয়েছিলেন, কমিশনের নোটিশ এখনও হাতে পাননি। নোটিশ দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তিনি। তবে দিলীপের সেই জবাবে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়নি বলেই সূত্রের খবর। আর এই কারণে এদিন তাঁর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকছে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
তবে কমিশনের এই সিদ্ধান্তে শাসক শিবির থেকে শুরু করে অন্য বিরোধি দলগুলো একেবারেই যে সন্তুষ্ট নন তা বলেই যায়। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে তরজা। এই প্রসঙ্গে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেবের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, “দেরিতে হলেও জাতীয় নির্বাচন কমিশন দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে।এটা গুরু পাপে লঘু দণ্ড । তবে এই বিলম্বের ফলে দিলীপ ঘোষ পঞ্চম দফার প্রচারে অংশ নিতে পারলেন। কমিশনের উচিত ছিল শীতলকুচির গুলিকাণ্ডের পর দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পরই তাঁকে ব্যান করা।
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, দিলীপ ঘোষকে ব্যান করা হয়েছে এতো দেরিতে কেন? রাহুল সিনহা কে? চার আনার নেতা। ৯ বার নির্বাচনে হেরেছেন। বাংলায় ঘুরে ঘুরে হারছেন। দিলীপ ঘোষকে এতো দেরিতে কেন ব্যান করলো কমিশন ? এমনকি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশ্ন তোলেন, দিলীপের প্রচারে ২৪ ঘন্টার জায়গায় কেন ৭২ ঘন্টা নিষেধাজ্ঞা নয়? পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, পঞ্চম দফা নির্বাচনের প্রচার পর্ব ইতিমধ্যেই শেষ, তবে এখন এই নির্দেশে কী লাভ!