নিজস্ব সংবাদদাতা: শত শত কিলোমিটার হাঁটার পর ট্রেন লাইনের ওপরই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়া ১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিককে পিষে দিয়ে চলে গেল ট্রেন। এঁদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু ছিলেন। ঘটনায় কোনও রকমে বেঁচে যাওয়া ৫ জন গুরুতর আহতকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হাসপাতালে। তাঁদেরও অবস্থা সঙ্গিন বলেই জানা গেছে।
ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রর ঔরঙ্গাবাদ জেলায় শুক্রবার কাকভোরে । প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে লকডাউনে কর্মহীন ওই শ্রমিকের দল তৃতীয় দফায় লকডাউন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। রাস্তা জুড়ে পুলিশের কড়াকড়ি, ধরলে ফের কোয়ারেন্টাইন অথবা কাজের জায়গায় ফেরৎ পাঠানো ইত্যাদি এড়ানোর জন্যই রেললাইন ধরেই বাড়ি ফিরছিলেন। তাছাড়া রেলপথ কিছুটা সংক্ষিপ্তও হয়। দিনভর হাঁটার পর ক্লান্ত শ্রমিকরা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন লাইনের ওপরই। তাঁদের ধারনা ছিল লকডাউনে ট্রেন চলছেনা কিন্তু ওই রাস্তায় যে মালগাড়ি আসবে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি তাঁরা।
মহারাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে, শুক্রবার ভোর সোয়া পাঁচটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ঔরঙ্গাবাদ জেলার সাতনা ও কারমাদ রেলস্টেশনের মাঝে গাড়েজলগাঁও গ্রামের কাছে। ঘুমন্ত ওই শ্রমিকদের ওপর দিয়ে চলে যায় ডিজেল ও পেট্রোলের ডজন ডজন খালি ট্যাংকরবাহী মালগাড়িটি। ট্যাংকরবাহী ওই মালগাড়ি নান্দেড় থেকে মানমাড়ের দিকে যাচ্ছিল। ঘটনাটি ঘটেছে ঔরঙ্গাবাদের কানমাড়ের কাছাকাছি।
দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে ছুটে গেছে পুলিশ ও রেলের কর্তা, স্থানীয় প্রশাসন। গুরুতর আহত ৫ জনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিকটবর্তী হাসপাতালে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ঘটনাস্থল থেকে ৬৫ কিলোমিটার দুরে ঝালনা থেকে হাঁটা শুরু করেছিল এই দলটি। ঝালনার একটি স্থানীয় ইস্পাত কারখানায় ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করতেন এঁরা। ভোরে ফের হাঁটার প্রস্তুতি নিতেই মধ্যরাতে শুয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। ঝোপ জঙ্গল ভরা ওই এলাকায় অন্য কোনও উপায় না থাকায় ট্রেন লাইনেই শুয়ে পড়েছিলেন। জানা গেছে, মধ্যপ্রদেশ দক্ষিণের দিকে কোনও রাজ্যে ফিরছিলেন তাঁরা।
ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারই উত্তর মধ্যপ্রদেশের অভিবাসি শ্রমিকদের নিয়ে একটি ট্রেন ঔরঙ্গাবাদ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু অনেকেই নিদারুণ অর্থ সঙ্কট কিংবা শেষ পুঁজি টুকু পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটেই ফিরছেন। মধ্যপ্রদেশের এই হতভাগ্য শ্রমিকের দলটিও সেই তালিকায় ছিলেন।
ঔরঙ্গাবাদের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মীনা মাকওয়ানা জানিয়েছেন, মর্মান্তিক ঘটনা। আমরাও রেল মারফৎ দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরেছি। ওরা ভোর রাতেই জানিয়েছেন ১০ থেকে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সারাদেশ জুড়েই শ্রমিকরা বাড়ি ফেরার জন্য হাঁটছেন। কখনও হাঁটার ক্লান্তি ,কখনও অনহারে কখনও আবার পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর এসেছে। এ অবধি ১০০ জন ছড়িয়ে গেছে মৃত্যুর সংখ্যা তবে সব কিছুকেই ছাপিয়ে গেল শুক্রবারের ঘটনা। যদিও রেল এখনও টাকা ছাড়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ট্রেনে চড়তে দিতে নারাজ আর সেই টাকা কে দেবে তাই নিয়ে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের লড়াই চলছে।