শশাঙ্ক প্রধান: সাত সকালে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার জলচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জঁহাট গ্রামের এক ব্যক্তির। বাড়ি থেকে বাজার যাওয়ার সময় পিংলা-ময়না রাজ্য সড়কের ওপরে একটি ডাম্পার পিষে দিয়ে চলে যায় ৪৪ বছরের ওই ব্যক্তিকে। ডাম্পারের তলায় পিষে একেবারে দলা পাকিয়ে রাস্তার সঙ্গে মিশে যাওয়ার মত অবস্থা। মাথা কিংবা শরীরের প্রায় কোনও অংশই অবশিষ্ট থাকতে দেখা যায়নি। সাত সকালেই এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তেজিত হয়ে ওঠে এলাকার মানুষজন। ক্ষুব্ধ হয়ে পথ অবরোধে সামিল হয় জনতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ওই ব্যক্তির নাম শুভেন্দু সাহু। নিজের জঁহাটের বাড়ি থেকে বাজার করতে বেরিয়ে ছিলেন। পিংলার জলচক পেরিয়ে থেকে বলাইপন্ডা বাজারে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে বড়িষা অশ্বত্থতলা বাজারের কাছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যাক্তি জানিয়েছেন, ‘ওই সময় রাস্তার পাশে এক ব্যক্তির রাখা কাঠের লগ বোঝাই করা হচ্ছিল একটি মেসিনট্রলিতে। ফলে রাস্তার অনেকটি অংশ দখল করেছিল মেশিনট্রলিতে। উল্টোদিক অর্থাৎ বলাইপন্ডার দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসছিল একটি ডাম্পার। ডাম্পারটিকে জায়গা দিতেই শুভেন্দু সাইকেল নিয়ে সরে যায় রাস্তার পাশে। কিন্তু পিচ রাস্তার পাশের অংশ মাটি থেকে উঁচু হয়ে থাকায় ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে রাস্তার ওপরেই পড়ে যান শুভেন্দু আর সেই মুহুর্তেই তাঁকে পিষে চলে যায় ডাম্পারটি। পুরো শরীরটাই পিষে গিয়ে ঘটনা স্থলে মৃত্যু হয় শুভেন্দুর।
এদিকে এই ঘটনার জন্য রাজ্য সড়কের পাশে অবৈধ ভাবে কাঠ, বালি ইত্যাদি নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখাকেই দায়ি করে ক্ষোভ উগরে দেয় স্থানীয় জনতা। তাঁদের আরও দাবি পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতার কারনেই দিনের পর দিন সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে রাস্তার পরিসর। এই কারনেই একের পর এক ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে যার মর্মান্তিক পরিণতি বৃহস্পতিবারের সকাল। পরিবারের একমাত্র সদস্যকে হারিয়ে অনিশ্চিত হয়ে গেল একটি পরিবার। প্রায় ঘন্টা খানেকের পথ অবরোধ করে গ্রামবাসীরা,পরে পিংলা থানার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ উঠে যায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় শুভেন্দু জলচক গ্রামপঞ্চায়েতের অধীন জল সরবরাহ বিভাগের ঠিকাদারের অধীন কাজ করতেন। পাশাপাশি একটি সমবায় সমিতির অস্থায়ীভাবে পাওনা আদায়ের কাজ করতেন। শুভেন্দুর স্ত্রী এবং ১০ বছরের এক ছেলে রয়েছে । জঁহাট গ্রামের এক শিক্ষক সমীরন বাবু বলেন ছেলেটি খুব সাদামাটা,সহজ,সরল ছেলে ছিল। শুভেন্দুর মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পিংলার জঁহাট সহ কান্নায় ভেঙে পড়েন আশেপাশের মানুষজন।
এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়েই বিকালে এলাকায় ছুটে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভূঁইয়া। ততক্ষণে শুভেন্দুর দেহ এসে পৌঁছেছে বাড়িতে। তাঁর দেহে মাল্যদান করার পাশাপাশি শুভেন্দুর স্ত্রী ও সন্তানকে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন সরকার সর্বোত ভাবে তাদের সাহায্য করবে। মন্ত্রী এদিন তৃনমূল কংগ্রেসের তরফ নগদ ৫০হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন শুভেন্দুর স্ত্রীর হাতে। পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে ৭হাজার টাকা দেওয়া হয় সৎকারের জন্য। মানস ভূঁইয়া জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আরও ২লক্ষ টাকা দেওয়া হবে ওই পরিবারকে। মানস ভূঁইয়া জানান, শুভেন্দুর স্ত্রী গীতাকেপ্ৰশিক্ষণ দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে শুভেন্দুর কাজেই নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি তার ১০বছরের গোপাল সাহুর পড়াশুনার যাবতীয় দায়ভার নেবে দল। রাজ্য সড়কের পাশ থেকে যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী অবিলম্বে সরানোর জন্য পুলিশকে উদ্যোগী হতে নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী।