নিজস্ব সংবাদদাতা: মুকুলের পুনরায় তৃনমূল পর্ব চালু হাওয়ার পর দলবদলের জোয়ার এখন ঘাসফুলগামী। দলে ঢোকার লাইনের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। এরই মধ্যে দলে ফিরতে চেয়েছেন রাজীব ব্যানার্জী এবং প্রবীর ঘোষালের মত নেতারা। মমতা ব্যানার্জী বলেছিলেন বটে একেবারে নির্বাচনের মুখে যারা দল ছেড়েছিলেন তাঁদের ফেরাবেনা দল কিন্তু মুখে বলা আর বাস্তবের বাধ্যবাধকতা বোধহয় এক নয় আর সেকারণেই বোধহয় তৃনমূলের রাজ্য মুখপত্র কুনাল ঘোষ ইতিমধ্যে রাজীব ব্যানার্জীর সাথে ‘সৌজন্য’ সাক্ষাৎ সেরেও ফেলেছেন।
রাজীব এবং প্রবীররা দলে ফিরতে চলেছেন এমনটা অনুভব করছেন তৃনমূলের সেই সব নিচুতলার কর্মীরা যাঁদেরকে সদ্য হয়ে যাওয়া নির্বাচনে রাজীব এবং প্রবীরের তীব্র আক্রমনের মুখে পড়তে হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সেই সব তৃনমূল নেতা কর্মীরা প্রবীর-রাজীবকে চায় না। তৃনমূলের ওই নেতা কর্মীদের ক্ষোভ এখন কতটা গভীরে তারই ফের প্রমান মিলল হাওড়ার ডোমজুড় এবং কোন্নগরে। রাজীবের বিরুদ্ধে বুধবার ডোমজুড়ের জগাছা ব্লকে পড়ে পোস্টার। সেখানে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লেখা, “মীরজাফর রাজীবকে দলে নেওয়া চলবে না”।
অন্যদিকে হুগলির কোন্নগরেও প্রবীর ঘোষালের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে। যেখানে লেখা হয়েছে, ‘মধুচক্রের নায়ক, গদ্দার প্রবীর ঘোষালকে তৃণমূলে নেওয়া যাবে না।’
যদিও এটা নতুন কিছু নয়। রাজীবের তৃণমূলে ফেরার জল্পনা যেদিন থেকে তৈরি হয়েছে, সেদিন থেকেই হাওড়ার সলপ, ডোমজুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্মীদের একাংশ কিছুতেই এই প্রত্যাবর্তন মেনে নিতে পারবে না বলে পোস্টার লাগাতে শুরু করে। দলের অসময়ে রাজীব তৃণমূল ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায় বিজেপি-তে যোগদানের পর তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর মারধর করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই এই বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে তাঁরা সরব হয়েছেন বলে জানান তৃণমূলের এক নেতা।
অন্যদিকে, উত্তরপাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের বিরুদ্ধেও পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ হচ্ছে হুগলির কোন্নগর। সেখানকার কর্মীদের একাংশও যে তাঁকে চায় না, তা এই পোস্টারে স্পষ্ট। ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন প্রবীর। কিন্তু ভোটের ফলপ্রকাশের পর বেসুরো গেয়েছিলেন প্রবীর ঘোষালও। তখন থেকেই জল্পনা তৈরি হয়, তাহলে কি তিনিও তৃণমূলে ফিরতে চান? এসব নানা অজানা প্রশ্নের মাঝেই প্রবীর ঘোষালের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে। তাতে লেখা, ‘মধুচক্রের নায়ক, গদ্দার প্রবীর ঘোষালকে তৃণমূলে নেওয়া যাবে না।’
যদিও স্থানীয় তৃনমূল নেতৃত্ব এই পোস্টারের দায় নিতে চাননি। প্রবীরের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ার ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, এই ধরণের পোস্টারে দলের কোনো অনুমোদন নেই। তৃণমূলে কে ফিরবেন, কে ফিরবেন না তা সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব যাই-ই বলুক। প্রবীরের ফেরা নিয়ে তৃণমূলের একাংশ যে ক্ষোভে ফুঁসছে তা কিন্তু বলা যেতেই পারে। অন্যদিকে রাজীবের প্রত্যাবর্তনের জল্পনাও তুঙ্গে। এই জল্পনার মাঝেই ডোমজুড়েও ক্ষোভ- বিক্ষোভ ও পোষ্টার পড়া অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য এই ঘটনায় তাঁদের দলে ফেরা আটকাবে বলে মনে হয়না। মুকুল রায় দলে ফিরতে চাইলে কালীঘাটের রাস্তায় শুয়ে পড়ে যারা সেই ফেরা আটকাবার কথা বলেছিলেন সেই দেবাংশুরা এখন দিব্যি বাড়িতেই শুয়ে পড়েছেন।