নিজস্ব সংবাদদাতা: “কোন দল এটা করেছে সেটা বিষয় নয়, একজন মানুষ হিসাবে আমি এই ধরনের ঘৃনা ছড়ানোকে সমর্থন করিনা। আমি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা উচ্চারণ করেছিলাম। শুধু সেই মানুষই নয় যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন, সব মানুষেরই পাশে। অযথা পার্টিকে বদনাম করার চেষ্টা করবেননা দয়া করে। আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, একে আরও কঠিন করে তুলবেননা। আসুন ঐক্য, ভালোবাসা আর শান্তি কায়েম করি।” গত দু’দিন ধরে কেশপুরের মহিষদা গ্রামে ১৮জন ব্যক্তিকে সামাজিক বয়কট করা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। বিজেপির দাবি এই ভাবেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে। পাল্টা তৃনমূলের দাবি, তাদের দলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে বিজেপি আর তারাই এই লিফলেট তৈরি করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানার যে গ্রামে সেই মহিষদা গ্রাম আসলে ঘাটাল সংসদীয় ক্ষেত্রের সাংসদ তথা অভিনেতা দেব ওরফে দীপক অধিকারীর জন্মভূমি। মহিষদা তৃনমূল কংগ্রেসের নাম দিয়ে কম্পিউটার টাইপ করা ১৮জনের নামের তালিকায় রয়েছে বিজেপি, সিপিএম ছাড়াও নির্বাচনের প্রাক্কালে সিপিএম-আইএসএফের প্রচার মঞ্চ তৈরি করা একজন ডেকরেটারের নামও। ওই লিফলেটে বলা হয়েছে, “পার্টি’র অনুমতি ছাড়া কোনও জিনিসপত্র বিক্রয় করা যাবেনা। চা দোকানদের উদ্দেশ্যে জানানো যায় এই ব্যক্তিদের চা দেওয়া যাবেনা।” এবং আরও বলা হয়েছে “এই সমস্ত ব্যক্তিদের পার্টির অনুমতি ছাড়া যে দোকানদার মাল বিক্রয় করিবে তাহাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হইবে।”
যেহেতু এই লিফলেটের সঙ্গে দেবের নাম জড়িয়ে যায় বিতর্কে ওঠে রাজ্য জুড়ে। এরপরই শুক্রবার নিজের ফেসবুক পেজে দেব জানান, বিষয়টা নজরে আসার পরই তিনি কথা বলেছেন কেশপুর তৃনমূল নেতা কর্মীদের সাথে। দেব লিখেছেন, ‘কেশপুরে ব্যক্তিগত ভাবে আমার দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। এবং তাঁরাও বিষয়টি পুনরায় খতিয়ে জানিয়েছেন যে টিএমসি পার্টি অফিস / সদস্যদের দ্বারা এমন নোটিস দেওয়া হয়নি।’ যদিও দেবের এ দাবি মানতে নারাজ বিজেপি-র ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা নেতা তন্ময় ঘোষ। তিনি বলেন, “কেশপুর এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল। নির্বাচনে হার-জিত থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে বিরোধীদের বয়কট করতে হবে।”
ঘটনায় প্রথমেই কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কেশপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের নবনির্বাচিত প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা গোটা বিষয়টাকে বিজেপির নোংরা রাজনীতি বলে দাবি করেছেন। একই দাবি কেশপুর তৃণমূলেরও। দলের ব্লক সভাপতি উত্তম ত্রিপাটি দাবি করেছেন, “গোটাটাই বিজেপির নোংরা রাজনীতি। তদন্ত হলেই পরিস্কার হয়ে যাবে কারা আছে এই খেলার পেছনে।”
যদিও দেব কিন্তু এরকম কোনোও দাবি করেননি যে এটা বিরোধীরা করেছে বরং তিনি বলেছেন, ‘কোন দল এটা করেছে বিষয় নয়….।’ প্রশ্ন হচ্ছে যদি দেব নিজের দলের লোকেদের সাথে কথা বলেই থাকেন তবে তিনি কী সন্তুষ্ট নন তাঁদের কথায়? যদি সন্তুষ্ট হয়েই থাকেন তবে তিনি কেন বললেন যে, ‘কোন দল এটা করেছে সেটা বিষয় নয়..? অথবা কেন তিনি এমনটা বললেন যে, ‘ অযথা দলকে বদনাম করবেননা। এমনিতেই কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, তাঁকে আরও কঠিন করে তুলবেননা!” এই কথা কী বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নাকি নিজের দলের কর্মীদের জন্যই এই পরামর্শ?