নিজস্ব সংবাদদাতা: ১২ ঘন্টার মধ্যে জোড়া মৃত্যু শোক আছড়ে পড়ল খড়গপুর শহরের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার রেল কলোনিতে। কয়েক ঘন্টা আগেই বিশাখাপত্তনমে দুর্ঘটনায় মৃত জামাইকে দেখতে গিয়ে মৃত্যু হল শাশুড়ি সহ ৩ জনের। রবিবার ভোর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার মানডসা নামক এলাকায়, ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর যখন চালক সমেত ৬ জনকে বহন করে নিয়ে যাওয়া স্কর্পিও গাড়িটি একটি পণ্যবাহি লরির পেছনে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই চালক সমেত ৩ জনের মৃত্যু হয়। মৃতরা হলেন কে. নাগমনি(৪৮), আর. দ্বারকা (২৩) এবং লাবণ্য (২৩)। এঁদের মধ্যে লাবণ্য হলেন নাগমনির ছোট পুত্রবধূ। ঘটনায় খুবই সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন ছোট ছেলে। দুর্ঘটনায় বড় ছেলে ও পুত্রবধূও জখম হয়েছেন। তিনজন স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মৃত লাবণ্যের মাসি চন্দ্রকলা জানিয়েছেন, ” বিশাখাপত্তনমের হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ডে ভেঙ্গে পড়ার ঘটনায় একমাত্র কন্যার স্বামী তথা নাগমনির জামাই ভাস্কর রাওয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই দুই পুত্র ও পুত্রবধূদের নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ নিজেদের স্কর্পিও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নাগমনি। করোনা পরিস্থিতিতে প্রথমে চালক পাওয়া যায়নি। পাশের বাড়িরই যুবক দ্বারকাকে রাজি করান গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যেতে। দুই ছেলেই তাঁদের সন্তানদের রেখে যান। মৃত লাবণ্যর তিন বছরের দুই জমজ ছেলেকে আমাদের কাছে (বাপের বাড়ি)রেখে যায়। রাত্রি ১২টা নাগাদ আমার দিদি অর্থাৎ লাবন্যর মাকে ফোন করে লাবন্য বাচ্চাদের খোঁজ খবর নেয়। সেই আমাদের সাথে শেষ কথা। এরপর ভোর বেলায় আমরা দুর্ঘটনার খবর পাই।”পুলিশ সূত্রে জানা গেছে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রাত ২টা নাগাদ। মনডসার কাছে সোমপেটা লাগোয়া এলাকায় চেন্নাই-কলকাতা জাতীয় সড়কের ওপর। ঘটনাস্থল থেকে বিশাখাপত্তনমের শতনাম যেখানে ওরা যাচ্ছিলেন তার দুরত্ব তখনও ২৩০কিলোমিটার এবং প্রায় ৪ঘন্টার রাস্তা বাকি ছিল। পুলিশের প্রাথমিক ধারনা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে শোকার্ত মেয়ের কাছে পৌঁছানোর জন্যই ছুটছিল পরিবারটি। আর সেই সময় হয়ত পলকের জন্য চোখ লেগে গেছিল চালকের। সামনেই ছিল পণ্যবাহী লরি, নিমেষের মধ্যেই স্কর্পিওটি আছড়ে পড়ে লরির পেছনে। তারপরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা তৃনমূল নেত্রী পূজা নাইডু জানিয়েছেন, ” কে নাগমনি রেলে চাকরি করতেন এবং অত্যন্ত স্বাধীনচেতা মহিলা ছিলেন। জামাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই শোকার্ত মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই দুই ছেলে বউমাকে নিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই খড়গপুর থেকে বেরিয়ে পড়ে ছিলেন। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারা যায়নি।”
পরিবার সূত্রে জানা গেছে আহতরা হলেন নাগমনির বড় ছেলে কে রাজশেখর ও তাঁর স্ত্রী কে লক্ষ্মী, ছোট ছেলে কে দিলেশ্বর রাও। ইতিমধ্যেই মৃত ও আহতদের আত্মীয়রা অন্ধ্রপ্রদেশ পৌঁছে গেছেন সেখানে তাঁদের দেহ ময়নাতদন্ত হওয়ার পর দেহ নিয়ে তাঁরাখড়গপুর উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। অন্ধ্র প্রদেশ পুলিশ ও খড়গপুর পুলিশ পরস্পর সমন্বয় রেখে চলেছে এই ঘটনা পরম্পরার দিকে। উল্লেখ্য ১ আগস্ট বিশাখাপত্তনমের ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন একাধিক কর্মী।