ওয়েব ডেস্ক: মৃত বাবার পাশে বসেই ৪৮ ঘন্টা কাটিয়ে দিল মেয়ে। মা-ভাইকে হারানোর পর বাবাই ছিল তাঁর একমাত্র সম্বল। মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পরই ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন বেহালার সরশুনার ওই মহিলা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আচমকা বাবার চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি বছর ৯০ এর ওই বৃদ্ধর মেয়ে। ফলে বাবাকে কোনোমতেই কাছ ছাড়া হতে দেবে না টানা ২ দিন মৃত বাবার দেহ আটকে রাখেন মেয়ে৷ এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকেই ওই আবাসন থেকে দুর্গন্ধ বেরতে শুরু করে। প্রথমে দুর্গন্ধের উৎস বুঝতে না পারলেও বুধবার সকালে সন্দেহের বশেই প্রতিবেশীদের তরফে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে দেখেন দরজা ভেতর থেকে আটকানো। বেশকিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর শেষমেশ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পুলিশ দেখেন, দেহের পাশেই স্থির হয়ে বসে রয়েছেন মেয়ে। এরপর পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বছর ৯০ এর ওই বৃদ্ধ। দিন দুই-তিনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, বার্ধক্যজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধের। তবে আপাতত পুলিশের তরফে ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনায় স্থানীয় প্রতিবেশীদের তরফে জানানো হয়েছে,বছর খানেক আগেই মৃত বৃদ্ধের স্ত্রী ও ছেলে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বৃদ্ধের মেয়ে। এর আগে মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পরও তাদের দেহ আগলে রাখার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই খুব একটা তাকে আর বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখা যেত না। সবসময় বাড়ির ভেতরেই থাকতেন তারা। এমনকি বাজার দোকানেও সেভাবে যেতেন না। ফলে দীর্ঘদিন বাইরে না বেরিয়ে কিভাবে খাবার আনাতেন তা নিয়েও অনেকবার জানাতে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ওই মহিলা কিছুই জানাননি। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। পাশাপাশি ওই মহিলাকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যায় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শ্রীরামপুরে এমনই একটি ঘটনা সামনে এসেছিল। এক বৃদ্ধার মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে প্রায় তিন-চারদিন মায়ের দেহ আগলে ঘরের মধ্যে ছিলেন। এদিকে তীব্র দুর্গন্ধ বেরনোয় স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে দেখে, ঘরের মধ্যে বৃদ্ধার পচাগলা দেহ পড়ে রয়েছে। আর পাশেই বসে রয়েছেন তাঁর বছর ৫৫ বছরের মেয়ে। ফ্যালফ্যাল চোখে মায়ের দেহের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ওই মহিলা। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। এরপর শ্রীরামপুর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।