Homeএখন খবরফের অনমানবিক কলকাতা মেডিক্যাল! দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকিতেও দেখা মেলেনি নার্সের, অক্সিজেনের অভাবে মৃত...

ফের অনমানবিক কলকাতা মেডিক্যাল! দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকিতেও দেখা মেলেনি নার্সের, অক্সিজেনের অভাবে মৃত তরুণী

ওয়েব ডেস্ক : এ যাবৎকালে চিকিৎসার গাফিলতির সহ একাধিক অভিযোগে বারংবার কাঠগড়ায় উঠেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। ফের একই ঘটনায় প্রাণ হারালেন বছর ২০ এক তরুণী। প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিল সুজাতা সাউ নামে ওই তরুণী। কোনোমতে তাকে বেডে শুইয়ে অক্সিজেন ও স্যালাইন দিয়ে চলে যায় নার্স। এদিকে সকাল হতেই দেখা যায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ফাঁকা, হাতের স্যালাইনের চ্যানেল খুলে গোটা বিছানা রক্তে ভেসে গিয়েছে। এদিকে সিলিন্ডারে অক্সিজেন শেষ। শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতে চিকিৎসক, নার্সদের ডেকেই চলেছে মেয়েটি৷ কিন্তু কেউ কোথায় নেই। ছোটো মেয়েটির এমন অবস্থা দেখে চুপ করে থাকতে পারেনি ওয়ার্ডের বাকি রোগীরা। তারাও চিকিৎসক নার্সদের খোঁজ করতে শুরু করেন। কিন্তু হাজার ডাকাডাকিতেও দেখা মেলেনি একজন নার্স কিংবা চিকিৎসকের।

এদিকে শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতেই সকলের সামনেই মৃত্যু হল সুজাতা সাউ নামে ওই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর। এদিকে মেয়েটি যে করোনায় আক্রান্ত তাও নিশ্চিত নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ আরজিকর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করা হলেও তার করোনা রিপোর্ট তখনও এসে পৌঁছায়নি। রিপোর্ট যখন এল ততক্ষণে সব শেষ। এদিকে রিপোর্টে জানা যায় মেয়েটি করোনায় আক্রান্তই নয়। রিপোর্ট নেগেটিভ। অথচ রিপোর্ট আসার আগেই শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট থাকায় করোনা রোগীদের সাথেই রাখা হয়েছিল ওই তরুণীকে। কলকাতা মেডিক্যালের বিরুদ্ধে এমনই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন ওই ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অন্য একজন রোগী।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গ্রিন বিল্ডিং-এ চিকিৎসাধীন ছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা দোলন অধিকারী। ঘটনার দিন গোটা বিষয়টি নিজের চোখেই দেখেন ওই রোগী। সম্প্রতি এক প্রথম সারির বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, “৪ সেপ্টেম্বর রাতে ভর্তি হয় মেয়েটি। তখনই সে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। সকাল হওয়ার পর তাঁর যন্ত্রণা এবং শ্বাসকষ্ট দুই-ই বাড়তে থাকে।” তরুণীর অবস্থা দেখে অন্যান্য রোগীরা নার্সদের খোঁজ করলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, যেহেতু ওই সময় শিফট পরিবর্তন চলছে৷ সেকারণে শিফল পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত হাজার ডাকাডাকি করলেও নার্সদের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।

দোলন দেবী আরও বলেন, “মেয়েটি রাত থেকেই বার বার খেতে চাইছিল। আমার ওঠার ক্ষমতা ছিল না। তাও সকালে ওর বেডে গিয়েছিলাম। আমি নিজের থেকে ২টো বিস্কুট খাওয়াই ওকে। বারবার বলছিল, ‘আন্টি খুব কষ্ট হচ্ছে। একটু সিস্টারদের বলো, আমাকে বাঁচিয়ে দাও।” চোখে একরাশ আক্ষেপ নিয়ে এদিন প্রত্যক্ষদর্শী রোগী ওই বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, “চোখের সামনে স্যার বাঁচান, সিস্টার বাঁচান, বলতে বলতে মেয়েটার মৃত্যু দেখলাম। ভয় লাগছিল। একটু চিকিৎসা পেলে মেয়েটা হয়ত ও বেঁচে যেত। কয়েকজন মোবাইলে ঘটনার বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও তুলেছিল কিন্তু হাসপাতালের তরফে নানাভাবে ছবিগুলি মুছে দিয়ে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেন।”

জানা গিয়েছে, মৃত তরুণী মহারানী কাশীশ্বরী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। গত ২৪ অগাস্ট জন্মদিন উপলক্ষে কয়েকজন বন্ধুকে বাড়িতে ডেকে জন্মদিন পালন করে সে। এরপরই ২রা সেপ্টেম্বর থেকে আচমকা তাঁর জ্বর আসে। প্রাথমিকভাবে ডাক্তার না দেখিয়ে মেডিক্যাল শপ থেকে কেনা জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু ৪ সেপ্টেম্বর বিকাল থেকে সুজাতার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করে, শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এরপর দ্রুত তাকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু রিপোর্ট আসা অবধি অপেক্ষা করেনি আরজিকর। করোনা সন্দেহে তাকে কলকাতা মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসার গাফিলতি ও হাসপাতালের অমানবিকতায় মৃত্যু হয় সুজাতা সাউর। এদিকে আরজিকর হাসপাতাল সুজাতার রিপোর্ট হাতে পেলে জানা যায় সে করোনায় আক্রান্ত ছিলই না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানে শুধুমাত্র কলকাতা মেডিক্যালই নয় একই সাথে কাঠগড়ায় উঠে আসছে আরজিকর হাসপাতালের নামও।

RELATED ARTICLES

Most Popular