নিজস্ব সংবাদদাতা: বড় শখ করে কিনেছিলেন চার চাকা গাড়িটা! স্বামী কেন্দ্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন। মাঝে মধ্যে ছুটিছাটায় একটা লম্বা ড্রাইভে চলে যাওয়া! কিন্তু অতিমারি তছনছ করে দিয়েছে সব হিসাব। চার পাশের মানুষ গুলো ভালো থাকলে তবেই না বেড়ানোর আনন্দ! তাই তাঁদের জন্যই নিজের চারচাকা গাড়িটাই দিয়ে দিলেন ওই গৃহবধূ। দিয়ে দিলেন বিশ্বের বৃহত্তম কোভিড স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ভলান্টিয়ার হাতে। রবিবার খড়গপুর শহরের প্রেমবাজারে দক্ষিণ শাখার হাতে নিজে গাড়িটি নিয়ে এসে গাড়ির চাবি তুলে দেন ওই গৃহবধূ।
সিপিএমের খড়গপুর শহর দক্ষিনের সদর দপ্তর প্রেমবাজার। এখানে ২৪ ঘন্টা ৭ দিন স্বেচ্ছাশ্রমের জন্য তৈরি আছেন ৪৮ জন স্বেচ্ছাসেবক। এই প্রেমবাজার সদরের নেতৃত্বাধীন রেড ভলান্টিয়ারের স্বেচ্ছাশ্রমের ৭৫ দিন পূর্ন হল রবিবার। সেই উপলক্ষ্যে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে এসেছিলেন রেডভলান্টিয়ারের অন্যতম সেনানায়ক ডাঃ ফুয়াদ হালিম। তাঁরই উপস্থিতি স্থানীয় হিজলী সমবায় সমিতি এলাকার বাসিন্দা শ্রীমতি সুতপা দাশগুপ্ত তাঁর গাড়ি ও চাবি তুলে দেন রেড ভলান্টিয়ারের হাতে। ডাঃ হালিম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব বিজয় পাল, খড়গপুর শহরের সবুজ ঘোড়াই, হরেকৃষ্ণ দেবনাথ, স্মৃতিকণা দেবনাথ প্রমুখরা।
উপস্থিত প্রেমবাজার সিপিএমের তথা রেড ভলেন্টিয়ারের সংগঠক অমিতাভ দাস জানিয়েছেন, ‘ অতিমারি সময়ের বিগত ৭৫দিন কাজ করছেন এই স্বেচ্ছাসেবক বন্ধুরা। এই ভয়াবহ সময়ে জন-স্বাস্থ্য পরিষেবা সহায়তা কেন্দ্র” নাম দিয়ে আমরা এই কাজ শুরু করেছিলাম যা এখনও চলছে। লকডাউনে টেলি-মেডিসিন, রোগী সহ পরিবারকে রান্না করা খাওয়ার পরিষেবা,আক্রান্ত পরিবারের বাজার ঔষধ সহ যেকোন জরুরী প্রয়োজনে পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছিল। বর্তমানে আমাদের যেটা আশু প্রয়োজন তাহল কোভিড বিধি মেনে রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জরুরি ভিত্তিতে পৌঁছে দেওয়া এবং গৃহ স্যানিটাইজেশনের পরিষেবা দেওয়া। আজ এই পরিষেবারই শুভ সূচনা করলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ ফুয়াদ হালিম৷ কিন্তু সব কিছুকেই যেন আজ ছাপিয়ে গেল শ্রীমতি সুতপা দাশগুপ্তের এই মহৎ দান। যা এই অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের আরও শক্তি জোগাল। তাঁর এই অবদান মানুষ মনে রাখবে অনেক দিন।”
শ্রীমতি দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ” আমার শ্বশুর মশাই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। এই গাড়িটি আমি তাঁর নামেই রেড ভলেনটিয়ারদের দিলাম। তাঁরই কাছ থেকে আমি দুঃখ কাতর, বেদনার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মন্ত্র শিখেছিলাম। আমি সামান্য গৃহবধূ কতটা আর করতে পারি? কিন্তু এই যে মানুষরা দিন রাত ২৪ঘন্টা অতিমারি পীড়িত মানুষের জন্য কাজ করছেন তাঁদের এই টুকু সাহায্য করতে পেরে আজ ভীষন ভালো লাগছে। আমার চারপাশের মানুষেরা সুস্থ থাকলেই আমার বেড়ানোর আনন্দ খুঁজে পাব।”
এতদিন রোগী পরিবহনের ভরসা ছিল বাইক। এবার একটা চারচাকা পাওয়ায় কাজের খুবই সুবিধা হল জানালেন এক ভলেনটিয়ার। বললেন, একটু সুস্থ থাকলে না হয় বাইকে সুবিধা পাওয়া যায় কিন্তু যাঁরা নার্ভাস হয়ে পড়ছিলেন কিংবা খুবই অসুস্থ তাঁদের মাঝখানে বসিয়ে পেছনে একজন বসতে হত। কাজটা ঝুঁকির ছিল। এবার কিছুটা সুবিধা হল। উল্লেখ্য বাংলায় এখন ৮০ হাজার রেড ভলেনটিয়ার কাজ করছেন করোনা আক্রান্তদের সহায়তায়।