Homeএখন খবরদুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলীদের হাত থেকে তৃনমূল সরকার বাঁচাতে 'হার্মাদ' সৎ সিপিএমই ভরসা টিম...

দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলীদের হাত থেকে তৃনমূল সরকার বাঁচাতে ‘হার্মাদ’ সৎ সিপিএমই ভরসা টিম পি.কের

নিজস্ব সংবাদদাতা: ঘাড়ের ওপর বিধানসভা নির্বাচন উঁকি দিচ্ছে। ৫০০কোটি বরাদ্দের কর্পোরেট ভোট ম্যানেজার পি.কে র লক্ষ্য, ক্লায়েন্ট বা খরিদ্দার তৃনমূল কংগ্রেসকে তৃতীয়বারের জন্য বাংলার গদিতে পুনর্বহাল করা অথবা বলা যেতে পারে অভিষেক ব্যানার্জীর মাথায় ‘রাজ মুকুট অথবা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্থ করা। কিন্তু বাস্তবে কাজে নেমে টিম পিকের উপলব্ধি,সারদা-নারদা থেকে করোনার রেশন আর আমফানের দুর্নীতি প্রায় পুরো দলটাকেই খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কাটমানি ফেরৎ দেওয়ার সময়েই বোঝা গিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে কী তীব্র ঘৃনা তৈরি হয়েছে, আবাস যোজনা থেকে শুরু করে মিশন বাংলা এমনকি যে কোনও সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কাটমানি খোর নেতাদের বিরুদ্ধে। এরপর সামনে এসেছে লকডাউনে সাধারন মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দের চাল আর আমফানের টাকা আত্মসাতের ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের বাইরে গিয়ে স্বচ্ছ আর সৎ লোক খুঁজতে হচ্ছে টিম পি.কে কে।

২০২১-এর নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য এই স্বচ্ছ আর সৎ নেতার খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের টিম। আর কী আশ্চর্য এক্ষেত্রে তাঁদের ভরসা এখন সেই হার্মাদ সিপিএম। সিপিএম নেতাদের দোর গোড়াতে গিয়ে কিংবা ফোনে টিম পিকের লোকেরা বলছে, তৃণমূলে আর তেমন নেতা পাওয়া যাচ্ছেনা, এই ধরনের নেতা নাকি এখন তৃণমূলে বড়ই অভাব। ২০১১ তে তৃনমূল জেতার পরেই ‘সিপিএম দুর্নীতিগ্রস্ত, সিপিএমকে বয়কট করুন, সিপিএমকে সাপের মত মারুন’ ইত্যাদি নানা কথা বলা হয়েছিল। এমন কি খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছিলেন, সিপিএমের সঙ্গে চায়ের দোকানেও আড্ডা মারা যাবেনা কিন্ত মাত্র ৯ বছরের মাথায় সেই সিপিএমই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে টিম পি.কের।

রীতিমতো লিস্ট বানিয়ে সিপিএম কর্মী নেতাদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন কিংবা ফোন করছেন প্রশান্ত কুমারের টিম । ‘হার্মাদ’ বামেদের ভাবমূর্তিকেই হাতিয়ার করতে মাঠে নেমে পড়েছে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। পিকের টিমের কথায় এখন বামেদের যা ভাবমূর্তি আর গ্রহণযোগ্যতা, তা অনেক দলেরই নেই। ভোটকুশলী মানলেও তৃণমূল অবশ্য প্রকাশ্যে তা নামতে নারাজ। যদিও সেই সৎ আর স্বচ্ছ নেতার খোঁজে নেমে কার্যত ঘাড়ে ধাক্কা খেতেও হচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের টিমকে। অনেক নেতা দেখা তো করেনইনি, সরাসরি পিকের টিমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। এমনই একজন রাজ্যের প্রাক্তন ক্যাবিনেট মন্ত্রী দেবেশ দাস।

এর আগে পিকের টিমের প্রস্তাব ফিরিয়েছেন বামেদের প্রাক্তন মন্ত্রী, বিধায়ক, প্রাক্তন সাংসদ। সবার কাছেই ছিল একই প্রস্তাব, পদ পাবেন। কোনও কিছুর অভাব থাকবে না। কিন্তু টালি কিংবা টিনের ঘরে থেকেই প্রস্তাব ফিরিয়েছেন, সিপিএম-এর প্রাক্তন বিধায়ক লক্ষীকান্ত রায়, জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সাংসদ মহেন্দ্রকুমার রায়, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বনমালি রায়। প্রস্তাব ফিরিয়েছেন স্থানীয়স্তরের অনেক নেতাই।

এতদিন পিকের টিমের প্রস্তাবের কথা শোনা যাচ্ছিল মূলত উত্তরবঙ্গের কিংবা জঙ্গলমহল থেকে। এবার ফোন করা হয়েছিল কলকাতার থেকে একাধিকবার বিধায়ক হওয়া যাদবপুরের অধ্যাপক দেবেশ দাসের কাছে। তিনি জানিয়েছেন, পিকের টিমের তরফ থেকে তাঁকে ফোন করা হয়েছিল। তবে তিনি সেই প্রস্তাবে না বলে দিয়েছেন। পিকের টিম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন, তিনি তাতেও না করে দিয়েছেন।

সরাসরি একটি ফেসবুক লাইভে দেবেশ দাসের ব্যাখ্যা মানুষ কেনা যায়, কিন্তু আদর্শ কেনা যায় না। তিনি আরও বলেছেন, যে আদর্শে তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাতে পিকের টিমের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া যায় না। কার্যত প্রশান্ত কিশোরের টিমের সদস্যদের প্রাক্তন মন্ত্রী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তাঁকে এনিয়ে বিরক্তি না করাই ভাল। গোটা ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। জয়ী এমএলএ, এমপি কিনতে দেখা গেছে এদেশে কিন্তু মাত্র চার শতাংশের দলের লোকেরও এত দাম! পিকে না হলে কে জানত?

RELATED ARTICLES

Most Popular