নিজস্ব সংবাদদাতা: শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে সে কথা নির্দিষ্ট ফর্মে জানিয়েছেনও প্রধান শিক্ষক কিন্তু তারপরও তাঁকে নির্বাচনের কাজে যুক্ত করা হয়েছে! এই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চাওয়ায় ওই শিক্ষিকার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানশিক্ষককে বলা হচ্ছে। ঘটনায় রীতিমত মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন শিক্ষিকা যা তাঁর গর্ভাবস্থায় একেবারেই উচিৎ নয়।
বৃহস্পতিবার এমনই মারাত্মক অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হলেন শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষকর্মীরা। ভোট কর্মীদের প্রতি নির্বাচন কমিশনের অসম্মানজনক আচরণের প্রতিবাদ সহ বিভিন্ন দাবিতে নির্বাচন কলকাতায় কমিশনের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এমনই এক অমানবিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সদস্যরা।
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর মহকুমার চকমকরামপুর হাইস্কুলের এক শিক্ষিকাকে মেটারনিটি লিভ থাকাকালীন জেলার নির্বাচন কমিশন তাঁকে ভোট কর্মী হিসেবে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়েছে। যদিও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দাবি তিনি pp2 পূরণ করার সময় জানিয়েছিলেন উনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও তাঁকে এই ডিউটি দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই ওই মহিলা শিক্ষিকা তাঁর নাম বাতিল করার জন্য আবেদন করতে গেলে জেলার পিপি সেলে গেলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”
রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ, ” শুধু তাই নয় ওই শিক্ষিকা প্রশিক্ষণ নিতে না যাওয়ায় তাঁর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কমিশন চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে, কেন তিনি ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি একশন নিচ্ছেন না এবং নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে কমিশনকে তা প্রত্যাহার করতে হবে বলে ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।”
সংগঠনের অন্যতম সদস্য চন্দন ঘোড়াই যে দাবি গুলি কমিশনকে দেওয়া হয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,”সংগঠনের তরফে আমরা দাবি করেছি, শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্যান্সার, গুরুতর অসুস্থ, সম্পূর্ণ অন্ধ, কিংবা সদ্যোজাত শিশুর মা সহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভোট কর্মীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবেদন জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে শোকজ নোটিশ ধরানো হচ্ছে। ৩০% বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সত্ত্বেও করোনা ভাইরাসের অজুহাতে ভোটের সময় সীমা সন্ধ্যা ৬:৩০ টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। টানা প্রায় দুদিন কাজ করার পর নির্বাচনের পরের দিন ভোট কর্মীদের জন্য অন্য রাজ্যে অন ডিউটি ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের রাজ্যে তা নেই।এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভোট কর্মীদের প্রতি নির্বাচন কমিশনের অসম্মানজনক আচরণের করা হচ্ছে।, সুনিশ্চিত নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার (১১ই মার্চ) নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পর অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক বিজিত কুমার ধর-এর কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অনামিকা চক্রবর্তী বলেন, সমস্ত ভোটকর্মীর সুনিশ্চিত নিরাপত্তার বিষয়ে একটি প্রেস নোট জারি, শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্যান্সার, গুরুতর অসুস্থ, সম্পূর্ণ অন্ধ, কিংবা সদ্যোজাত শিশুর মায়েদের ভোট কর্মীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং হয়রানি বন্ধ, সম্মানজনক শোকজের ভাষা প্রত্যাহার, ভোটের পরদিন ভোট কর্মীদের অন ডিউটি, রেমুনেরেশন বৃদ্ধি, ভোট কর্মীদের দিয়ে নয়, প্রত্যেকটি বুথে ভোটিং মেটিরিয়ালস পৌঁছে দেওয়া এবং নেওয়ার দায়িত্ব সেক্টর অফিসের, ভোটের সময়সীমা বৃদ্ধি প্রত্যাহার, ভোটের ট্রেনিং করে ফেরার সময় ভোট কর্মী মনোজ ঘোষের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ সহ বিভিন্ন দাবিগুলি যুক্তি সহ তুলে ধরলে তিনি প্রতিটি বিষয় শুনেছেন এবং কথা দিয়েছেন এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ভোট কর্মীদের ট্রেনিং-এর সময় লাঞ্চের জন্য বরাদ্দ অর্থ একাউন্টে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন,” সমাজের অগ্রণী অংশ হিসাবে শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মীদের নির্বাচনের কাজ করার জন্য যে দায়িত্ব কমিশন দিয়ে থাকেন হাজার প্রতিবন্ধকতা নিয়েও আমরা তা পালন করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও করব। কিন্তু যে নূন্যতম নিরাপত্তা ও মানবিক ব্যবহার আমরা প্রত্যাশা করি সেটুকুও না পেলে আমাদের আন্দোলনে না নেমে উপায় কী? একজন শিক্ষিকাকে মাতৃত্বকালীন অবস্থায় দুদিন বাইরে থাকার মত কাজ দেওয়া হচ্ছে। তিনি সেই কাজ থেকে অব্যহতি চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটা কোনও সভ্য দেশে হয়? আমরা কমিশনকে জানিয়েছি ওই বিষয় সহ যে গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলি আমরা পেশ করেছি তা যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা রাজ্য জুড়ে তীব্র আন্দোলনের ডাক দেবো।”
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগঠনের সদস্য সদস্যরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। স্মারকলিপি প্রদান ও অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র, রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী, সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অনামিকা চক্রবর্তী, চন্দন ঘোড়াই প্রমুখ।