নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরের চন্ডিপুরের এক সভায় তৎকালীন রাজ্য যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মেরে নজরে পড়েছিল তমলুকের যুবক ৩২ বছরের দেবাশিস আচার্য। তমলুকের পাবর্তীপুরের সেই যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টা নাগাদ কোলাঘাটের হলদিচক এলাকা থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উদ্ধারকারী অ্যাম্বুল্যান্স রক্তাক্ত অবস্থায় দেবাশিসকে উদ্ধার করে ভর্তি করে তমলুক জেলা হাসপাতালে। তার কিছু সময় পরই সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।
বিকেল নাগাদ ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন তাঁর পরিবারের লোকেরা। আসে তমলুক থানার পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পরিবারের দাবি খুন করা হয়েছে দেবাশিসকে। দেবাশিসের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধে সাড়ে ৭ টা নাগাদ বন্ধুদের সাথে বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন দেবাশিস। ওইদিন রাতে দুটি বাইকে তিনজন গিয়েছিলেন ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে সোনাপ্যতা টোলপ্লাজার কাছে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়েছিলেন ওই তিনবন্ধু। দেবাশিস একটা বাইকে একাই ছিলেন। তারপর বাড়ি ফেরেননি।
ওই বন্ধুদেরই একজন সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘হঠাৎ একটি ফোন পেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় দেবাশিস। তারপর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।’ বন্ধুকে আসতে না দেখে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে আসে দুই বন্ধু। এরপর আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোরে স্থানীয় মানুষজন টোলপ্লাজা থেকে কিছুটা দূরে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁকে। স্থানীয় মানুষজনই তুলে নিয়ে এসে তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যায় তাঁকে।
জানা গেছে মাথায় এবং মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল তাঁর। মুখ এতটাই ক্ষত বিক্ষত ছিল যে তাঁকে প্রাথমিকভাবে চিনতেই পারা যায়নি। এতক্ষণ ধরে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকেরা তমলুক থানায় নিখোঁজ ডায়রি করতে গেছিলেন সেখানেই পুলিশ তাঁদের তমলুক হাসপাতালে একটি অপরিচিত আহত যুবক ভর্তি আছে বলে জানালে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে সনাক্ত করেন।
উল্লেখ্য ৬ বছর আগের সেই ঘটনার সময় দেবাশিসের সংগে এবিভিপি-র সংযোগের কথা উঠে এসেছিল। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরে ঘটনার জন্য সেই সময়ই অভিষেকের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন দেবাশিসের পরিবারের লোকেরা। অনুতাপ প্রকাশ করেছিলেন দেবাশিসও। ক্ষমাও করে দিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু এই বিধানসভা নির্বাচনের সময় ফের বিজেপি নেতা কনিষ্ক পান্ডা তাঁকে পাশে বসিয়ে বেশ কিছু উক্তি করেছিলেন যা সেই পুরোনো ক্ষতকে মনে করিয়ে দিয়েছিল। সেই দেবাশিসেরই মৃত্যকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। ঘটনার তদন্তে নেমেছে তমলুক থানার পুলিশ। খুন না দুর্ঘটনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তকারীরা। পুলিশ মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অতীশ বিশ্বাস। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে খুন করা হয়েছে দেবাশিসকে।