নিউজ ডেস্ক: ক্রমশই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক হাসপাতালের অক্সিজেন। নিরুপায় হয়ে চিকিৎসকের কাতর আর্জি, “রোগীর পরিবারকে অনুরোধ করছি, যেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন রয়েছে সেখানেই নিয়ে চলে যান রোগীকে। আমরা জানি, এই রোগী কারও মা, কারও বাবা। কাছের মানুষকে হারালে আমিও স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়ব।” সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিল্লির বাটরা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ এস সি এল গুপ্ত একথা বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেললেন। চিকিৎসক জানান, “আমরা জানি রোগী কারও প্রিয়জন। তাঁকে হারানোর মত কষ্টকর আর কিছু নেই। তাই যেখানে অক্সিজেনের সরবরাহ রয়েছে সেখানেই রোগীকে নিয়ে যান।
দেশ জুড়ে মারণ ভাইরাসের একের পর এক রেকর্ড দেশবাসীকে আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে। তারই মধ্যে অক্সিজেন সঙ্কট গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়ার কাজ করছে। বিশেষ করে দিল্লীতে অক্সিজেনের চরম হাহাকার দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই শ্রী গঙ্গারামপুর, জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালসহ দিল্লির একাধিক হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর খবর এসেছে; সংখ্যাটা হাফ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গিয়েছে। দিল্লীর তুঘলকাবাদে অবস্থিত বাটরা হাসপাতালেও চিত্র কিছুটা একই। তবে সেখানে অক্সিজেন ফুরিয়ে আসার পর জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে দিল্লী সরকার।
শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বাটরা হাসপাতাল থেকে জানানো হয় অক্সিজেন একেবারেই ফুরিয়ে আসার কথা। তারপরই সেখানে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। তবে সবচেয়ে কষ্টকর খবর আসে দিল্লীর সরোজ হাসপাতাল থেকে। অক্সিজেন নেই, তাই রোগী ভর্তি নিতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্যাকআপ অক্সিজেন আসেনি, অক্সিজেনের জোগান না বাড়ালে যেকোনও সময়ে বড় কোনও অঘটন ঘটে যাবে বলেই আশঙ্কা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে শনিবারই দিল্লি হাইকোর্ট কড়া বার্তা দিয়েছে। ‘অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দিলে ফাঁসি কাঠে ঝোলান হবে’, বলে জানিয়ে দিয়েছে দিল্লী হাইকোর্ট। অক্সিজেনের অভাব নিয়ে মহারাজা অগ্রসেন ও বাটরা হাসপাতালে দায়ের করা মামলার শুনানিতে শনিবার দিল্লি হাইকোর্ট কড়া বার্তা দিয়ে বলে, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহে গাফিলতি দেখলে কেন্দ্র, রাজ্য বা স্থানীয় স্তরের কোনও অফিসারকেই ছেড়ে কথা বলা হবে না। অক্সিজেন সরবরাহে কারা বাধা দিচ্ছে, একবার বলুক দিল্লী সরকার। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের ফাঁসিতেও ঝোলানো হবে।‘
দিল্লীর ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে কেজরিওয়াল সরকার দাবী জানিয়েছে আরও অক্সিজেনের। রাজ্য সরকারের দাবী, “অক্সিজেন পর্যাপ্ত না পেলে কী পরিস্থিতি হতে পারে, তা আমরা গত ২৪ ঘন্টায় দেখেছি। কেব্দ্রের তরফ থেকে দিল্লি এই মুহুর্তে ২৯৭ মেট্রিক টন অক্সিজেন পেয়েছে। প্রয়োজন আরও অক্সিজেন।“ সেই দাবীতেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে দিল্লী সরকার। বাঁচাতে হবে দিল্লীকে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ে বাধা দিলে তাঁকে ফাঁসি কাঠে ঝোলান হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
তবে শুধু দিল্লী নয়, অক্সিজেন নিয়ে এমনই সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে মানিকতলার জেএন রায় হাসপাতালে। ছ’টা বাজার কিছু সময় পর থেকে হাতে মাত্র ১ ঘণ্টার অক্সিজেন বাকি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এদিকে সেইসময় হাসপাতালে ৮০ জন রোগী ভর্তি, যাদের মধ্যে ৫০জন করোনা আক্রান্ত। কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন, জানেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।