নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘ আমি এতদিন ছিলামনা ওরা অনেককে মারধর করেছে, জরিমানা করেছে কিছু করতে পারিনি। আমি এসেছি প্রায় তিনমাস হল এখনও অবধি কারও গায়ে হাত পড়েনি। তবে যদি কেউ এখন সেসব করতে আসে তবে হাত-পা ভেঙে দেব। তারপর আমিই তাদের চিকিৎসা করাবো।’ সম্প্রতি ভোটের প্রচারে নেমে এমনই ভাষায় সুশান্ত ঘোষকে কথা বলতে দেখা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী থানা এলাকায়। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ৮বছর জেলার বাইরে থাকতে হয়েছিল ঘোষকে। রাজ্য সরকার ধারাবাহিক ভাবে তাঁর জেলায় ঢোকার বিরোধিতা করে এসেছিল। এরপর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অনুমতি মেলে পশ্চিম মেদিনীপুরে নিজের চন্দ্রকোনা রোডের বাড়িতে ফেরার। এলাকাটি শালবনী বিধানসভার অধীন। গত ডিসেম্বর মাসে বাড়ি ফেরার পর থেকেই নিয়ম করে গ্রামের পর গ্রাম, পাড়া, হাট, মেলায় চষে বেড়াচ্ছেন সিপিএমের এই দাপুটে নেতা। এরই মধ্যে চলে এসেছে বিধানসভার নির্বাচন ফলে সেই প্রচার আরও নিবিড় করেছেন তিনি। এরকমই এক প্রচারে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির ভালুকশোল গ্রামে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলাপ – চারিতার সময় এরকমই কথা বলতে শোনা যায় ঘোষকে।
প্রচার চলার সময় ভালুকশোল গ্রামের কিছু মানুষ সুশান্ত ঘোষের সামনে এসে জানান, ২০১১র আগে তারা যে মাওবাদীদের হাতে অত্যাচারিত হয়েছিলেন সেই মাওবাদীদেরই পরে দেখা গেল তৃনমূল হয়ে যেতে এবং তারা সেই একই অত্যাচার চালিয়েছে। ইদানিং তাদেরই কেউ কেউ আবার বিজেপি হয়েছে। এরপরই সুশান্ত ঘোষ বলেন, ” কারা মাওবাদী আমি জানি, মাওবাদীরাও জানে সুশান্ত ঘোষকে। তৃণমূলের বাপ ঠাকুরদাও জানে, বিজেপির-র বাপ ঠাকুরদাও জানে সুশান্ত ঘোষ কে! আমি এতদিন থাকতে পারিনি। যে তিনমাস এসেছি কারও গায়ে হাত পড়েনি। এরপর যার ক্ষমতা হবে হাত দেওয়ার, তাকে তুলে এনে হাত পা ভেঙে দেব। তারপর আমিই চিকিৎসা করাব।’
এই কথা তিনি যে বলেছেন এটা স্বীকারও করে নিয়েছেন ঘোষ। বলেছেন, ‘ এ রাজ্যে নিজের দলের হয়ে কথা বলতে গিয়ে, দলের পতাকা ধরতে গিয়ে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, খুন হয়েছেন, ঘর ছাড়া হয়েছেন, জরিমানা করা হয়েছে। রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। মানুষের কাছে যেতে সাধারণ মানুষ থেকে দলীয় কর্মীরা সেই কথাই বলেছে আর আমি তাঁদের পাশে থাকার কথা বলেছি। মানুষ অত্যাচারিত হবে, প্রশাসন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে?’
তৃনমূল ও বিজেপির পক্ষে এই ঘটনার সমালোচনা করে বলা হয়েছে সুশান্ত ঘোষ সেই পুরনো কায়দায়তেই পেশিশক্তির রাজনীতি করছেন। যাঁর প্রত্যুত্তরে ঘোষ বলেছেন, ‘যদি অত্যাচারিত মানুষের রুখে দাঁড়ানোতে কেউ পেশিশক্তি দেখেন তবে সেটা তাই। মানুষের জীবন এবং সম্পত্তি বাঁচানোর অধিকার তাঁর নিজেরই রয়েছে। কেউ যদি পেশিশক্তি চেনে তাকে পেশিশক্তি দিয়েই জবাব দিতে হবে।’
এদিন ভালুকশোল গ্রামে ঢুকতেই দলে দলে মানুষকে আসতে দেখা যায় সুশান্ত ঘোষকে দেখতে, কথা বলতে। এক বৃদ্ধকে দেখা যায় সুশান্ত ঘোষের জামার হাতা টেনে ধরে বলতে, ‘সুশান্তবাবু আমার কথাটা আগে শোনো।’ ঘোষকে বলতে শোনা যায়, ‘বাবু নয়, হয় শুধু সুশান্ত নয়, সুশান্ত ভাই বলে ডাকতে হবে। তবেই শুনব।’