অশ্লেষা চৌধুরী: ‘এটাই তৃণমূলের শেষের শুরু’। শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগের পর তাঁর দলবদলের জল্পনা উস্কে দিয়ে এমনটাই বললেন দিলীপ ঘোষ। দক্ষিণ থেকে উত্তর, সমতল থেকে পাহাড় সর্বত্রই যেন দাপিয়ে বেরাচ্ছিলেন তিনি। অনুগামীদের সক্রিয়তায় দিদির পাশেই বিভিন্ন জায়গায় ঝুলছিল নতুন যুবরাজের পোস্টার। সেই থেকে রাজ্য রাজনীতিতে একটাই নাম ঘোরাঘুরি করছিল, যা হল শুভেন্দু অধিকারী। তাহলে কী দিদির সঙ্গ ছাড়ছেন তিনি, গেরুয়া শিবিরে যোগ দিচ্ছে, না কী নিজস্ব দল গঠন করবেন- চলছিল নানান তর্ক-বিতর্ক। এত কিছুর মাঝে আজ দুপুরেই মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। চিঠি লিখে এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও তিনি মেল করে জানিয়েছেন।
মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করার আগে এদিন তাৎপর্যপূর্ণভাবে ‘জেড’ক্যাটেগরির যে নিরাপত্তা তিনি পেতেন তাও যাতে রাজ্য সরকার প্রত্যাখান করে নেয় তার জন্য রাজ্য সরকার ও পুলিশের কাছে আবেদন জানান শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এতদিন যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি কনভয়ে টেল কার, পাইলট কার এবং এসকর্ট কার পেতেন তা তিনি প্রত্যাহার করে দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে শুভেন্দুর পদত্যাদ ঘিরে জোর শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে। তাঁর পদত্যাগ দেওয়ার পরেই দিলীপ ঘোষের মন্তব্য ‘এটাই তৃণমূলের শেষের শুরু’। শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এও ইঙ্গিত দেন, বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে শুভেন্দুর। তবে তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ নেই বলেও দাবী করেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি।
আবার শুভেন্দু মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়া মাত্রই তাঁকে বিজেপিতে যোগ দিতে আহ্বান জানান বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। মুকুল রায় বলেন, “শুভেন্দু তৃণমূল স্তর থেকে রাজনীতি করছে। গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উঠে এসে নেতা হয়েছে। ও আমাদের সঙ্গে এলে বাংলায় পরিবর্তনের আন্দোলন আরও জোরদার তথা শক্তিশালী হবে।”
প্রতিক্রিয়া জানাতে বাদ রাখেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, ““মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাপুড়ের মতো বিজেপিকে বাংলায় ডেকে এনেছিলেন। বিজেপি বহিরাগত ওঁর মুখে মানায় না। ঠিক যেমন সাপুড়েকে সাপের ছোবলে মরতে হয়, তেমনই তৃণমূলের ললাটে লেখা রয়েছে।“ মুর্শিদাবাদের রবিনহুড আরও বলেন, “শুভেন্দুকে তৃণমূল কখনও মর্যাদা দেয়নি। স্রেফ কাজ করিয়ে নিয়েছে। আমি নন্দীগ্রামে গিয়ে দেখেছি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুভেন্দু আন্দোলন করেছিলেন।“ শুভেন্দু অধিকারী না থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না বলেও এদিন মন্তব্য করেন তিনি।
তবে শুভেন্দুর এই পদত্যাগের ঘটনায় যথেষ্ট ব্যথিত হয়েছেন সৌগত রায়। মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করলেও শুভেন্দুকে নিয়ে তিনি আশাবাদী বলে দাবী করে সৌগত বাবু বলেন, ‘যতক্ষণ উনি পার্টিতে আছেন দলের নির্দেশ অনুসারে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। এখনও ও কথা বলতে রাজি আছে। ওর সঙ্গে কথা বলে পজিটিভ মনে হয়েছে। ও আগেও বলেছে আমি পার্টি ছাড়বো না।‘
উল্লেখ্য, আজ শুক্রবার দুপুরে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কাছে পরিবহণ দফতর-সহ মোট ৩টি দফতরের দায়িত্ব ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের খবর, মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেও এখনো বিধায়ক পদ ও তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছাড়ছেন না শুভেন্দু।
তবে এরই মধ্যে আগামীকালই শুভেন্দুর দিল্লী যাওয়া নিয়ে চারিদিকে হইহই পড়ে গিয়েছে। একদিকে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, মুকুল রায়ের আহ্বান, রাজনৈতিক মহলের নানান বিশ্লেষণ বারবার এটাই জানান দিচ্ছে যে দল ছাড়তে চলেছেন শুভেন্দু। তবে শুভেন্দুর এক ঘনিষ্ট সূত্রের দাবী, “এ সব কথা ভিত্তিহীন। দাদা এখন দিল্লি, মুম্বই কোথাও যাচ্ছেন না। এক নেতা সম্প্রতি দাদা ও তাঁর পরিবারকে উদ্দেশ করে গালমন্দ করেছিলেন। বলেছিলেন, ক্ষমতা থাকলে সরকারি পদ, লাল বাতি ছেড়ে কথা বলুক। পরে দেখা যায়, সেই নেতার উপর যেন উপরের সারির প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। দাদা তাই সমস্ত সরকারি পদ ছেড়ে দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, ‘এখনই দাদাকে নিয়ে দলত্যাগের জল্পনা করা বৃথা। দাদা যদি দল ছাড়েন তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তবেই ছাড়বেন।‘ এই সূত্র অনুযায়ী শুভেন্দু দল ছাড়বেন ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ বা তার পরে। এর মাঝখানে কিছু সমীকরন মিলিয়ে নিতে চাইছেন। এখন কিছুদিনের জন্য তিনি দিল্লি যাওয়া আসা করবেন এমনটাও জানা গেছে কারন কিছু রফাসূত্র তৈরি করতে হবে দল ছাড়ার আগেই।