Homeএখন খবরনিরাপত্তার অভাব! নন্দীগ্রামে নিজের কার্যালয় আপাতত বন্ধই করে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী

নিরাপত্তার অভাব! নন্দীগ্রামে নিজের কার্যালয় আপাতত বন্ধই করে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী

নিজস্ব সংবাদদাতা: নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় নন্দীগ্রামে নিজের কার্যালয় আপাতত বন্ধই করে দিলেন একদা দোর্দন্ডপ্রতাপ শুভেন্দু অধিকারী। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান শাসক শ্রেণীর উল্টো শিবিরে থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যে কী পরিমাণ কঠিন কাজ তা সম্ভবতঃ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক তথা সদ্য শাসকশ্রেণীর বিপরীত শিবিরে চলে যাওয়া এই নেতা। একদা তাঁর বিরুদ্ধেই সন্ত্রাস চালিয়ে বিরোধীদের কার্যক্রম স্তব্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠত। নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে বন্ধ হয়ে গেছিল একের পর এক সিপিএমের কার্যালয়। আর আজ পরিস্থিতির কী অদ্ভুত সমাপতন, খেজুরি, নন্দীগ্রামে যখন বিরোধীরা দলীয় কার্যালয় খুলছে একে একে তখন তাঁরই কার্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা করতে হচ্ছে তাঁকে। অভিযোগ তাঁরই প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে। তাঁর এই কার্যালয় বন্ধ করার ঘোষনা তিনি করছেন যার মাত্র কয়েকঘন্টা আগেই গত প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ থাকা সিপিএমের তেরপেখ্যার দলীয় কার্যালয় খুলছেন লালঝান্ডার দল।

নন্দীগ্রামে পর পর দুটি হামলার মুখে পড়তে হয়েছে শুভেন্দু আধিকারিকে। ৮ই জানুয়ারি নন্দীগ্রামের জনসভায় দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, কৈলাশ বিজয় বর্গীয়দের উপস্থিতিতে হামলার ঘটনা ঘটে। তৃনমূলের দলত্যাগীদের মঞ্চে ইট পাটকেল পড়েছিল সেদিন। সেদিন জনসভার পাশাপাশি ছিল যোগদান মেলা। তৃনমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দানের জন্য ওই মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন নন্দীগ্রাম ও খেজুরির বেশকিছু তৃনমূল নেতাকর্মী। সেই মঞ্চে হামলা চালায় খেজুরির কিছু বিজেপির কর্মী সমর্থক। তাঁদের দাবি ছিল যারা অত্যাচারী, তৃণমূলী হার্মাদ তাদের বিজেপিতে নেওয়া চলবেনা। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে আঁচ করে সেদিন সরাসরি যোগদান হয়নি । শুধু মাইকে নাম ঘোষনা করেই যোগদান পর্ব সারতে হয় সেদিন।

দ্বিতীয় হামলার ঘটনা শনিবার রাতে। এদিন ভাঙচুর করা হয় তাঁর সহায়তা কেন্দ্রটিতে। দাদার অনুগামীদের পক্ষ থেকে এই সহায়তা কেন্দ্রটি খোলা হয়েছিল কিছুদিন আগেই। ওই কার্যালয়টি ভাঙচুর করার পাশাপাশি এদিন দুষ্কৃতীরা এলাকায় থাকা বিজেপি-র সমস্ত ঝান্ডা, ব্যানার নষ্ট করে পুড়িয়ে দেয়। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ ছিল শাসকদলের লোকেরাই এই কাজ করেছে যদিও অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। সেই ঘটনার প্রতিবাদেই মৌন মিছিল ও পথসভা ঘোষণা করা হয়েছিল বিজেপি-র তরফে।

এদিন দুপুরে শুভেন্দু অধিকারী, তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি প্রলয় পাল, প্রাক্তন তৃণমূল নেতা মেঘনাথ পালদের নেতৃত্বে নন্দনায়েকবাড়ে ভাঙচুর হওয়া কার্যালয়ের ( শুভেন্দু অধিকারীর সহায়তা কেন্দ্র) সামনে থেকে নীরব প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে মিছিলে হাঁটেন কয়েক হাজার বিজেপি কর্মী-সমর্থক। মিছিল গিয়ে শেষ হয় নন্দীগ্রাম থানার সামনে। সেখানে পথসভাতে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সরব হন শুভেন্দু। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘গোটা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। আমি যাদের দেখেছি ভাঙচুরের ঘটনায় তাদের নামে এফআইআর হয়েছে। ৩ দিন সময় দিলাম আমি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে আদালতে যাব। তিনি দাবি করেন সাত- আটটার মতো ঘটনা আছে যেখানে আমি নিজে আক্রান্ত হয়েছি, আহত হয়েছি। ভয় আমি পাইনা মৃত্যু একবারই হবে, দুবার হবে না।’
এর পরই তিনি ঘোষণা করেন, ‘কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য আমি অফিসটা বন্ধ রাখছি এখন।’

উল্লেখ্য আগামী ১৮ই জানুয়ারি নন্দীগ্রামে আসছেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। সেই সভাকে ঘিরে নন্দীগ্রাম, হলদিয়া আর খেজুরি ছাড়াও সমগ্র জেলা জুড়েই সাজ সাজ রব তৃনমূলে। ‘প্রেস্টিজিয়াস’ এই সভার মুখে অতিরিক্ত সক্রিয়তা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃনমূল। পাড়ায় পাড়ায়, এলাকায় এলাকায়, মোড়ে মোড়ে চলছে প্রচার। তৃনমূলের এই অতিরিক্ত সক্রিয়তার মুখে দাঁড়িয়ে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হতে পারে অনুমান করেই আপাতত তাঁর কার্যালয়টি বন্ধ রাখছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ঠিক পরের দিনই পাশের থানা  খেজুরিতে মূখ্যমন্ত্রীর পাল্টা সভা করার ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু।

RELATED ARTICLES

Most Popular