নিজস্ব সংবাদদাতা: একটা বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান কার্যত ছাপিয়ে গেল রাজনৈতিক জনসভাকে! একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠনের কর্মকর্তারা হারিয়ে দিলেন রাজনৈতিক সংগঠকদের কিংবা আরও একটু এগিয়ে বলা ভাল তৃণমূলের রাজনৈতিক সংগঠকদের। যে মঞ্চ থেকে রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বললেন, দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মত ফুলবি! ঘাটালের পাঁশকুড়া বাস স্ট্যান্ডে দুর্গাপুর ইউনাইটেড ওয়েলফেয়ার এ্যশোসিয়েশন আয়োজিত বৃহস্পতিবারের বিজয়াসম্মিলনী, যার প্রধান আকর্ষনই ছিলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী,সেই শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েও গেলেন,”আমার যুদ্ধ শুরু হয়েছে এখন আর চলবে মধ্যরাত অবধি!” না! কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, কিসের যুদ্ধ তিনি তা বলেননি কিন্তু উপস্থিত জনতার বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি। তাই শুভেন্দু যখন বলছেন, “আপনারা আমার সঙ্গে আছেন তো?” তখন চারপাশ থেকে সমস্বর প্রতিধ্বনিত হয়েছে, ‘আছি, আছি, আছি।”
মঙ্গলবার নন্দীগ্রামের পর বৃহস্পতিবারও ঘাটালের বিজয়া সম্মিলনীর সভা নিশ্চিত ভাবেই আপাদমস্তক অরাজনৈতিক কিন্তু অনুষ্ঠানের পৃষ্টপোষকরা আপাদমস্তক রাজনৈতিক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ তপন দত্ত, বর্তমান কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি, প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ কাবেরী চ্যাটার্জী সহ তৃণমূলের শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ সমস্ত শীর্ষ নেতাই উপস্থিত। আর মঞ্চের ওপাশে যাঁরা ছিলেন সেই জনতাও আদতে ঘাটাল মহকুমার ৫টি ব্লক থেকে আসা তৃণমূলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধী সভ্য সমর্থক যাঁরা শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থক এবং নিজেদের দলে বঞ্চিত, অবহেলিত বলে মনে করেন।
এই সভায় দাঁড়িয়েই শুভেন্দু জনতাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ঘাটালের মানুষের সঙ্গে কীভাবে প্রথম থেকেই রয়েছেন। ঘাটালে ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্বাচনে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই, বিভিন্ন স্কুলগুলিকে সাহায্য করা থেকে বিদ্যাসাগর মেলার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ব্যাখ্যা করে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কিভাবে ঘাটালের সঙ্গে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আর পরিবর্তে চেয়েছেন উপস্থিত জনতার সমর্থন।
বৃহস্পতিবার শুধু ঘাটাল নয়, ঘাটাল থেকে হুগলির পাণ্ডুয়ায় একটি কালীপুজোর উদ্বোধনে যাচ্ছেন শুভেন্দু আর সেকারনেই জনতাকে বলেছেন, “আপনারা অনেকক্ষন অপেক্ষা করছেন এবার বাড়ি ফিরে যান, আমার যুদ্ধ শুরু হয়েছে এখন চলবে সেই রাত্রি দেড়টা দুটো অবধি।” এরপরই তিনি বলেন, “আমরা চরৈবেতী, চরৈবেতী করে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়েই যাব। ট্রাকের পেছনে লেখা থাকে মনে আছে তো? দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মত ফুলবি।”
মন্ত্রী বলেছেন, “আমি মাটিতে বসা তৃনমূল কর্মী, গামছা পরে পান্তাভাত খাওয়া মানুষ।” বাস্তবিকই এই কথার মধ্যে দিয়ে তিনি মহানগরের নেতাদেরই কটাক্ষ করে গেছেন তা বোঝার অপেক্ষা রাখেনা। তবে সব কিছুকেই ছাপিয়ে গেছে এদিন জনতার নজির বিহীন উপস্থিতি। যদি উপস্থিতি বলে দিয়েছে ঘাটালের মাটিতেও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে রাজ্যের শাসকদল।