দণ্ড মহোৎসব ও কাক মহোৎসব উপেন পাত্র
সুবর্ণরেখা নদীর তীরে শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরে এক অভিনব মহোৎসব পালিত হয়, এই মহোৎসবের নাম দণ্ড মহোৎসব।বারো দিন দণ্ড মহোৎসব পালনের পর ত্রয়োদশ দিনে কাক মহোৎসব পালিত হয়।
শ্যামানন্দী বৈষ্ণব সমাজের প্রধান শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরে অবস্থিত।কলাইকুণ্ডার পাশে ধারেন্দা গ্রামে শ্যামানন্দের জন্ম হয়।তিনি কালনার হৃদয়চৈতন্য আচার্যের শিষ্য।একদা তিনি গুরুর সাথে বৃন্দাবনে যান।গুরু ফিরে এলেও শ্যামানন্দ বৃন্দাবনে থেকে যান।
ঐ সময় বৃন্দাবনে শ্রীজীব গোস্বামী বৈষ্ণব ধর্মের সংস্কার মানসে তিন পৃথক গুরুর তিন শিষ্য যথা, শ্রীনিবাস,নরোত্তম ও শ্যামানন্দকে বিশেষভাবে বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা দেন।ওদিকে গুরু হৃদয়চৈতন্যের কাছে মিথ্যা সংবাদ যায় যে শ্যামানন্দ গুরুত্যাগ করেছেন,যা বৈষ্ণব সমাজে অপরাধরূপে গন্য হয়।
হৃদয়চৈতন্য সংবাদের সত্য মিথ্যা যাচাই না করে বৃন্দাবনে গিয়ে বৈষ্ণব সমাজের কাছে অভিযোগ করেন।বৈষ্ণব সমাজের বিচারে দেখা যায় যে গুরু শিষ্যের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।তাই গুরু হৃদয়চৈতন্যকে দণ্ডস্বরূপ বারো দিনব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন করতে বলা হয়।শিষ্য শ্যামানন্দ গুরুর দণ্ডকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সারা ব্রজখণ্ডে ভিক্ষা করে হরিনাম সংকীর্তনের ব্যয় নির্বাহ করেন।এটি দণ্ড মহোৎসব নামে খ্যাত হয়।
শ্রীজীব গোস্বামী তিন ছাত্রকে যথোচিত শিক্ষা দিয়ে আচার্য উপাধিতে ভূষিত করেন এবং শ্রীনিবাসকে গৌড়বঙ্গ, নরোত্তমকে সমতট ও শ্যামানন্দকে উৎকলে ধর্ম সংস্কারের দায়িত্ব দেন।শ্যামানন্দ ঝারিখণ্ড পথে উৎকল যাবার পথে গোপীবল্লভপুরে শ্রীপাট প্রতিষ্ঠা করে রোহিনী গ্রামনিবাসী শিষ্য রসিকানন্দকে শ্রীপাটের মোহান্ত গোস্বামী পদে অভিষিক্ত করেন।
শ্যামানন্দ বৃন্দাবনের দণ্ড মহোৎসব পুনরায় শ্রীপাটে প্রচলন করেন।বারো দিন ধরে খোল কত্তাল ও নানা বাদ্য সহযোগে হরিনাম সংকীর্তন চলে।ফলে এলাকা থেকে ভয়ে সব কাকপক্ষী পালিয়ে যায়।ঝাড়ুদার পাখি কাকেরা না থাকায় শ্রীপাট এলাকায় পরিবেশ দূষণ ঘটে।
তাই শ্যামানন্দ মহোৎসবের পরদিন অর্থাৎ তেরতম দিনে শ্রীপাটের সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করার ও সব কোলাহল স্তব্ধ করার নির্দেশ দেন এবং নানারূপ দানাশস্য সারা এলাকায় ছড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন।এর ফলে কাকেরা দল বেঁধে ফিরে আসে এবং মহানন্দে খাবার খায়।এটি কাক মহোৎসব নামে খ্যাত হয়।আজও এই প্রথা মান্য করা হয়।