Homeসাহিত্যসুবর্ণরেখার কথাসুবর্নরেখার কথা-১৫।। উপেন পাত্র

সুবর্নরেখার কথা-১৫।। উপেন পাত্র

সুবর্নরেখা অববাহিকার জনশ্রুতি, সত্যতা অন্বেষনের একটি প্রচেষ্টা
উপেন পাত্র

গ্রাম গ্রামান্তরে নানা জনশ্রুতি থাকে।শুধুমাত্র এই রকমটা শোনা যায়– এর বেশী কেউ কিছু জানে না।ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্ভুক্ত
মহাপাল গ্রামে অনুরূপ এক জনশ্রুতি আছে– বিদ্যাসাগর মশাই এখানে এসেছিলেন। জনশ্রুতি বিষয়ে খোঁজ করে দুটি তথ্য পেলাম। প্রথমটি– অতীতে এই গ্রামে বেলিয়াবেড়ার জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র প্রহরাজ,ইনি বিদ্যোৎসাহী সাহিত্যিক ছিলেন, প্রতিষ্ঠিত একটি মধ্য বাংলা বিদ্যালয় ছিল(ষষ্ঠ মান পর্যন্ত)।এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলোক পণ্ডিত সর্বপ্রথম সুবর্ণরৈখিক লোকভাষায় সাহিত্য রচনা করেন।কৃষ্ণচন্দ্র বেলিয়াবেড়ায় স্থিত টোলেও পড়াতেন।
দ্বিতীয়টি– পাশের পেটবিন্ধি গ্রামে পাশাপাশি পৃথক বালক ও বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে-
“শ্রীহরিচরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়”ও” আত্যয়িক প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়”। এই গ্রামের শ্রীহরিচরণ বাগ ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র প্রহরাজের দুই পুত্রের গৃহশিক্ষক। “আত্যয়িক” কথাটির অর্থ হলো– জরুরীকালিন।শ্রীহরিচরণের ছেলে উমেশচন্দ্র বাগ একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন,তাঁর উদ্যোগে বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরে নানা গবেষকের আছে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে,দুয়ে দুয়ে চার করে আমি একটি হাইপোথিসিস খাড়া করি,তা হলো–
বিদ্যাসাগর মশাই দক্ষিণ বাংলার বিদ্যালয় পরিদর্শক থাকাকালিন নারী শিক্ষার উন্নতিকল্পে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনার জন্য বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের কাছে আবেদন জানান।তাঁর অনুপ্রেরণায় হুগলী ও মেদিনীপুর জেলায় প্রায় শতাধিক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।বিদ্যাসাগর মশাই স্বয়ং বিদ্যালয়গুলি উদ্বোধন করেন।কিন্তু পরবর্তীকালে অর্থাভাবে একে একে বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে যায়।

বহুকাল পরে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অর্থবরাদ্দ করে এবং বিদ্যোৎসাহীদের কাছ থেকে গণ আবেদন আহবান করে।গণ আবেদনের ভিত্তিতে বিদ্যাসাগর মশাই প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কতকগুলি বালিকা বিদ্যালয়কে জরুরী ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয়।এই কারণে “আত্যয়িক” নামকরণ করা হয়। স্বাধীন ভারতে এই বিদ্যালয়গুলিকে সাধারণীকরন করা হলেও কিছু বিদ্যালয়ের নামফলকে ‘আত্যয়িক” কথাটি থেকে যায়।
হাইপোথিসিস উপসংহার হলো– বেলিয়াবেড়ার জমিদার বিদ্যোৎসাহী কৃষ্ণচন্দ্র প্রহরাজ মহাপাল গ্রামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন,যা উদবোধনের জন্য বিদ্যাসাগর মশাই এই গ্রামে আসেন।

স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী আদি মহাপাল গ্রামের আশী শতাংশ সুবর্ণরেখা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।উক্ত বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।এর বহু পরে পেটবিন্ধি নিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামী উমেশবাবু বিদ্যাসাগর মশাই প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়টি তাঁদের গ্রামে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গণসাক্ষর সমন্বিত আবেদন দাখিল করেন।তাই পেটবিন্ধি গ্রামে “আত্যয়িক বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়” টি গড়ে ওঠে।

RELATED ARTICLES

Most Popular