নিজস্ব সংবাদদাতা: কেন প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে উঠছে? কেন বারবার ছুটে আসছে সর্বনাশের ঘূর্ণিঝড়? কেন এত বজ্রপাত? সবই জানে মানুষ কিন্তু ভাবের ঘরে চুরি করে। প্রকৃতি কীভাবে মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেয় বা আগামী দিনেও নেবে যদি না মানুষ প্রকৃতির ওপর অত্যাচার না কমিয়ে আনে তা বোঝার জন্য অন্য কোথাও নয় একবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ঘুরে আসুন। হ্যাঁ, সেই যে কথায় বলেনা, বাঁশ কেন ঝাড়ে ? এসো আমার ঘাড়ে। তারই হাতে গরম উদাহরণ পেতে চলে যেতে পারেন দাসপুর ২ ব্লকের দুধকোমড়া গ্রামপঞ্চায়েতে। ওই যে ঘূর্ণিঝড় যশ হয়ে গেল, সেই সময় রূপনারায়ন নদের জলোচ্ছ্বাসে জল ঢুকে পড়েছিল দুধকোমরা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীবরা ও চরমানুকর গ্রামে। গত ২৬শে মে ঢুকে পড়া জল আর নামছেইনা গ্রাম থেকে। কয়েক হাজার মানুষের বসতবাটি, রাস্তাঘাট, খেলারমাঠ, গোচারনভূমি, সবজিক্ষেত মায় শ্মশান অবধি এখনও জল থইথই করছে।
কিন্তু কেন এমন কান্ড? শ্রীবরা কিংবা চরমানুকর গ্রাম নদীর তীরেই। বন্যা হলে দাসপুর ২ ব্লকের আর ২৫/৩০টি গ্রাম জলের তলায় চলে যায় বটে কিন্তু সময়মত নেমেও যায় কিন্তু জলোচ্ছ্বাসের জল ২০দিন পেরিয়েও নামেনা কেন? কারন সেই একটাই মানুষের লোভ! জানা গেছে রূপনারায়ন নদীর উপনদী দুর্বাচটির সংস্কার শুরু করেছে সেচ দপ্তর। নদীগর্ভের পলিমাটি তুলে সেই মাটি নদীর পাড় চল্লিশ ফুট উঁচু করে বাঁধানো পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গ্রামের কিছু মানুষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও সেচদপ্তরের কিছু কর্তাকে ম্যানেজ করে সেই মাটি চুরি করার কাজ শুরু করেছে।
ওই গ্রাম দুটির বাসিন্দা গৌরাঙ্গ মন্ডল, গৌরিশঙ্কর জানা, পলাশ ব্যানার্জী, গণেশ চক্রবর্তীরা জানিয়েছেন ওই মাটি নিয়ে দুটি গ্রামের ৩০ থেকে ৪০টি পুকুর বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। অন্ততঃ ৫০০ বিঘা কৃষিজমি রাতারাতি ভরাট করে অকৃষি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। কৃষিজমি কিংবা জলাজমির চরিত্র বদল করার এই বেআইনি কারবারের জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, নদীর মাটি নিয়ে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে নিকাশি নালা, নিচু জমিও। আর এরফলে জলোচ্ছাসের যে জল কিছুটা পুকুরে আশ্রয় নিতে পারত, কিছুটা কৃষি জমিতে নেমে যেত আর বাকিটা নিকাশি নালা বেয়ে গ্রামের বাইরে যেতে পারত এখন তার যাওয়ার উপায় নেই।
এখন গ্রামের সর্বত্রই শুধু জল আর জল। সেই জমা জল ঘাস পাতায় পচে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। অবস্থা এমনটাই যে কেউ মারা গেলে তাকে দাহ করার জমি মিলবেনা ওই দুটি গ্রামে।পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে গবাদিপশুদের চরাতে নিয়ে যেতে হচ্ছে অনেক দূরে। কিছু নলকুপ জলের তলায়। আর অতি সম্প্রতি জলদুষন থেকে জলবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা অবিলম্বে জমা জল বের করার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে।
গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করে তাঁরা বলেছেন জল বের করার পাশাপাশি বেআইনি ভাবে ভরাট করা ৩০/৪০টি পুকুর ও ৫০০বিঘা কৃষি জমি থেকে ফের মাটি তুলে নদীর বাঁধে নিয়ে গিয়ে ফেলতে হবে। নচেৎ বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেচদপ্তর, পঞ্চায়েতের কর্তা ব্যক্তিরা।কোন পথে কীভাবে জল বের করা যায় সেসব খতিয়ে দেখা হয়। যদিও এই বিশাল পরিমান মাটি আদৌ ফের তুলে নিয়ে বাঁধে ফেলা কী ভাবে সম্ভব তা বুঝে উঠতে পারছেননা তাঁরা।
“এখুনি যা পরিস্থিতি তাতে এই জলকাদার মধ্যে জেসিপি, লরি ইত্যাদি নামানো সম্ভব হবেনা। জল নামলে, মাটি শক্ত হলে ভাবা যেতে পারে।” বলে জানিয়েছেন এক সেচ কর্তা। কিন্তু যারা মাটি চুরি করল? যাদের সাহায্য নিয়ে করল তাদের কি হবে? সেচ দপ্তর,ভূমি সংস্কার দপ্তর কোনও ব্যবস্থা নেবে কী? নাকি কেঁচোকে টানতে কেউকেটারাও টানা হবে ভেবে সব চুপচাপ হয়ে যাবে! তা হোক আপাতত প্রকৃতির প্রতিশোধ সামলে উঠুক গ্রামের বাসিন্দারা।