অশ্লেষা চৌধুরী: এবারে রাজ্যে আক্রান্ত খোদ মন্ত্রী! প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি। গুরুতর জখম মন্ত্রী জাকির হোসেন সহ কয়েকজন! বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখেই আক্রান্ত শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী। বোমাবাজিতে গুরুতর আহত জাকির হোসেনকে নিয়ে আসা হচ্ছে কলকাতায়। তাঁর সঙ্গে থাকা একাধিক অনুগামী আহত হয়েছেন ওই বিস্ফোরণে। ঘটনায় গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত দলীয় কর্মীদের একাংশকেই দায়ী করেছেন বিরোধীরা। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছে মুর্শিদাবাদ তৃণমূল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, কলকাতা ফেরার জন্য প্ল্যাটফর্মের দিকে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তখনই মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি করে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী। গুরুতর জখম হন মন্ত্রী ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী ও আহতদের সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গীপুর হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মন্ত্রীর অনুগামীদের একজনের ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে এদিন সন্ধ্যা বেলায় রেল স্টেশনের দিকে আসছিলেন তিনি। একটি কনভয় তাঁকে পৌঁছে স্টেশনের মুখে সেখান থেকে অনুগামী পরিবৃত হয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে দেখা যায় তাঁকে। তাঁকে ঘিরে কর্মীদের শ্লোগান সাউটিং চলছিল। তিনি হাসছিলেন, অনুগামীরা তাঁকে জায়গা করে দিচ্ছিল হঠাৎই একটি বিশাল কানফাটা আওয়াজ। চারদিক ঢেকে যায় ঘন অন্ধকার আর ধুলো ধুঁয়োয়। এরপর আর কিছুই দেখা যায়না। শুধুই কান্না আর আর্তনাদ। ছুটে আসে পুলিশ, রেলপুলিশ, রেল নিরাপত্তা বাহিনী। তাঁরাই উদ্ধার করেন মন্ত্রী এবং আহতদের। ঘিরে ফেলা হয় পুরো স্টেশন চত্বর। কেউ বলছেন বোমা রাখা ছিল আগে থেকেই, মন্ত্রী কাছে যেতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে কারও মতে বোমা ছোঁড়া হয়েছে। তবে নিশ্চিত করে এখনও কিছুই জানা যায়নি। চলছে বিস্ফোরণ এলাকার নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতি। যা সকালেই গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
কিন্তু কেন আক্রান্ত হলেন একজন মন্ত্রী? এই হামলার নেপথ্যে কাদের হাত রয়েছে?- সবটাই ধোঁয়াশা এখন। তৃণমূল সূত্রে দাবী, জেলায় গরু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন মন্ত্রী। এ নিয়ে এলাকার কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে তঁর বিবাদও ছিল, যার ফলে দীর্ঘদিন ধরেই টার্গেট ছিলেন জাকির হোসেন। পাশাপাশি, দলের একাংশের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ছিল বলেও দাবী অনুগামীদের। আক্রান্ত হতে পারেন বলে রঘুনাথগঞ্জ থানায় অভিযোগও দায়ের করেন জাকির হোসেন।
কংগ্রেসর ইঙ্গিতও একই দিকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ‘তৃণমূলের যে ঘরানা, তার সঙ্গে জাকির হোসেন চলতে পারেনি। তাই যারা লুঠ করে, চুরি করে, গরু পাচার করে, তাদের সঙ্গে জাকিরের দ্বন্দ্ব ছিল। জাকির চাইত না, চাষের জমি নষ্ট করে বাংলাদেশে হাজার হাজার গরু পাচার হোক। পুলিশও জাকির হোসেনকে সাহায্য করত না। সে সততার ভাবমূর্তি নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করত। এটাই তার অপরাধ। রাজ্যে একজন মন্ত্রীও নিরাপদ নন।’
বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। রাজ্যের একজন মন্ত্রীও নিরাপদ নন। বিরোধী দলের উপরে হামলা তো হচ্ছেই, এবার সরকারি দলের মন্ত্রীর উপরেও হামলা হচ্ছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এরকম হলে সাধারণ মানুষের কী হবে?’ এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি আবু তাহের বলেছেন, ‘কারা এই ঘটনা ঘটাল বুঝতে পারছি না। পুলিশ সুপারকে দেখতে বলেছি। আমরা দলের পক্ষ থেকেও তদন্ত করছি। বড় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। কে তার শত্রু? পুলিশ দেখছে।’
এদিকে এদিনই মুর্শিদাবাদের হরিহর পাড়ার মালোপাড়া গ্রামে এক তৃণমূল কর্মী কে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্করেঞ্জ থেকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। তাহাজউদ্দিন মন্ডল নামে ওই তৃণমূল কর্মীর মাথায় গুলি লেগেছে। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মুর্শিদাবাদ জুড়ে আতঙ্কের ছায়া।