অশ্লেষা চৌধুরী: “মোদিজী ৪বছর আগে আয়ুষ্মান ভারত এনেছেন যাতে সমস্ত ভারতবাসী যে কোনও জায়গায় চিকিৎসা করাতে পারেন। আর এরা (রাজ্য সরকার) ভোটের আগে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিচ্ছে। এই কার্ড নিয়ে আপনি কটকে গেলে চিকিৎসা পাবেন? ভেলোর কিংবা আ্যপেলোতে চিকিৎসা করাতে পারবেন? দেবী শেঠীর হার্ট হাসপাতাল কিংবা টাটা ক্যানসার রিসার্চ সেন্টার, এইমসে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন? এটা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নয়, এটা আসলে ভোট কার্ড।” পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের এক নজরকাড়া সমাবেশে এভাবেই মমতা ব্যানার্জীর সরকারকে তুলোধুনো করলেন সরকারের সদ্য পদত্যাগী মন্ত্রী তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বৃহস্পতিবার কেশপুরের আনন্দপুর থানার ঠিক উল্টো দিকের মাঠে বিজেপির ডাকা সভায় ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতই। শুধু এই কেশপুর বিধানসভা ক্ষেত্র থেকেই ২০১৯ লোকসভায় সাংসদ দেব লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধান পাওয়াতেই অনায়াস জয় এসেছিল তৃনমূলের। সেই জায়গাতে বিজেপির এই ভিড় নিশ্চিত ভাবেই ভাবাবে শাসকদলকে।
এই ভিড়ে ভরা সভা থেকেই মমতা ব্যানার্জীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু প্রশ্ন তোলেন,পচা জিনিস বেরিয়ে গেলে পায়ে এত কাঁটা ফুটছে কেন? তিনি বলেন, ‘যে আশা নিয়ে পরিবর্তন এনেছিলেন, তা কি পূর্ণ হয়েছে? তৃণমূল নেত্রী বলছেন, পচা জিনিস দল থেকে বেরিয়ে গেছে। পচা জিনিস বেরিয়ে গেলে পায়ে এত কাঁটা ফুটছে কেন?’ পাশাপাশি কেশপুরের জনসভা থেকে তৃণমূলকে চোর বলেও আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু।। তিনি বলেন, ‘গরু চোর এনামুল, তার নাম তৃণমূল। লকডাউনে চাল চোর, আমফানে ত্রিপল চোর, এখন আবার টিকা চোর।’ সম্প্রতি বেশ কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ককে টিকা নিতে দেখা গিয়েছে। আর সেই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করে শাসকদলকে আক্রমণ শানালেন নন্দীগ্রামের প্রাক্তন এই বিধায়ক।
অন্যদিকে কেন ২১ বছর বছর পর তৃণমূল ছাড়লেন শুভেন্দু সে বিষয়টিও জানালেন তিনি। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল নেত্রী কথায় কথায় নন্দীগ্রাম, কেশপুরের কথা বলেন। ভোটের সময় আসেন, তারপর পগারপার। লকডাউনে তৃণমূলের কোনও সাংসদ-বিধায়ককে দেখা যায়নি।’ আমি ২১ বছর পর কেন তৃণমূল ছাড়লাম? কর্মচারী হয়ে থাকতে পারব না, সহকর্মী হয়ে থাকতে পারি। তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি।’ কেশপুরের সভা থেকে এদিন পুরোন দলকে নিশানা করেন শুভেন্দু। একেরপর এক অভিযোগ শোনা যায় শুভেন্দুর গলায়। ফের উঠে আসে তোলাবাজ ভাইপো প্রসঙ্গ।
পাশাপাশি কেশপুরের সভা থেকে হুঙ্কার দিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর বলেন, লালমাটির দিলীপ ঘোষ আর ভালো মাটির শুভেন্দু অধিকারী এক সাথে হাত মিলিয়েছে। শুভেন্দু বলেন, কেশপুরে কি সত্যিই পরিবর্তন হয়েছে। একটা সময় সিপিএম এখানে যা বলতো তাই হতো। এখনও কি বদলেছে? এরপরেই শুভেন্দু বলেন, পুলিশ যাদের হাতে থাকে কেশপুর তাঁদের হাতে থাকে! এটাই দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে এখানে। তবে এবার বদলাবে বলে মন্তব্য বিজেপি নেতার। ভোটের সময় আসে ওরা ভোট হলেও পগারপার।
কেশপুরের সভা থেকে বামপন্থীদের কাছে শুভেন্দুর আবেদন বিজেপিকে ভোট দিন। তিনি বলেন, কেশপুরে অনেক বামপন্থী থাকেন। তাঁদের বলছি ভোট দিন বিজেপিকে। আমরা ছাড়া কেউ ওদের হারাতে পারবে না। একই সঙ্গে তিনি দাবী করেন, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে ভারতীয় জনতা পার্টির বিপুল ভোটে জয় যুক্ত হবেন।
তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন যে, আমি যখন যে দলটা করি খুব সম্মানের সাথে করি এবং নিষ্ঠার সাথে করি তাই এখন সর্ববৃহৎ পার্টি পৃথিবীর ভারতীয় জনতা পার্টিতে অংশগ্রহণ করেছি মন দিয়ে রাজনীতি করছে এবং এই জঙ্গলমহল থেকে সমস্ত ভারতীয় জনতা পার্টিকে উপহার দেব এটাই মোদীজি কে কথা দিয়েছি। এদিন ফের শুভেন্দু বলেন যে, কেশপুর থেকে ভোট লুট করা হয়েছিল বলেই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে তৃনমূল জিতেছিল নচেৎ এখান থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী ভারতী ঘোষই জয়ী হতেন।