Homeএখন খবরঘরে বাবা আর বাইরে পাওনাদারের অত্যাচার! অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা ডেবরার উপার্জনশীল কিশোরের

ঘরে বাবা আর বাইরে পাওনাদারের অত্যাচার! অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা ডেবরার উপার্জনশীল কিশোরের

শশাঙ্ক প্রধান: পরিস্থিতি তাকে অনেক বড় করে দিয়েছিল। এতটাই বড় যে মা আর তিন বোন, ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই মাত্র ১৩ বছর বয়সেই পড়াশুনা ছেড়ে হয়ে গেছিল রাজমিস্ত্রির যোগানদার। ১৬ বছর বয়সেই রাজমিস্ত্রি। সংসারের জোয়াল টানতে হত তাকেই এমন কি মদ্যপ বাবার মদের খরচও। কিন্তু একদিন সেই খরচ জোগাতে না পারায় বাবার অত্যাচারে অতিষ্ঠ কিশোর অবশেষে আত্মহত্যা করল।

ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার জালিমান্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের ঢ্যাঁঙা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে ১৬ বছরের ওই কিশোরের নাম সূর্য মল্লিক। ৩ বছর আগেই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে সে উপার্জন করতে নেমে পড়ে ছিল। সূর্যের দেহ মিলেছে নিজের বাড়ি থেকে সামান্য কিছুটা দুরে শ্যামচক স্টেশনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারের পেছনে একটি পেয়ারা গাছে ঝুলন্ত অবস্থায়। সোমবার ভোর বেলায় ওই কিশোরের দেহ দেখতে পেয়ে বাড়িতে খবর দেয় প্রতিবেশীরা। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। এই আত্মহত্যার পেছনে একটি মর্মান্তিক ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে যা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।

কিশোরের মা কাজল মল্লিক জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী বুধু মল্লিক একজন মাদকাসক্ত, পাঁড় মাতাল। ছেলেকে সংসারের খরচের পাশাপাশি স্বামীর মদের টাকা জোগান দিতে হত। মদের টাকা না দিলে চরম অশান্তি করত এমন কি ছেলেকে মারধর করত। প্রতিনিয়ত সেই অত্যাচার চলত। মদের টাকার দাবিতে ছেলের পাশাপাশি মারধর করত নিজের স্ত্রীকেও।

রবিবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় কিন্তু সেখানে এমন আরেকটি ঘটনা যুক্ত হয়ে যায় যা কীনা সূর্যকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়। সূর্যের মা কাজলের কথায়, ‘ কয়েকদিন আগেই গ্রামের পাশে একটি কালীপূজা হয়েছিল। সেই পূজা উপলক্ষ্যে আরও অনেকের মতই সূর্যও বাজি পোড়াচ্ছিল। এটি গ্রামের আনন্দ উৎসব। এই বাজি পোড়ানোর সময় দুর্ঘটনাবশত একটি বাজি ফেটে এক ব্যক্তি আহত হয়। সেই ব্যক্তি দাবি করে যে তাঁর চিকিৎসার খরচ দিতে হবে সূর্যকে। সূর্য রাজি হয়। সেই টাকা দিয়ে যাচ্ছিল সে।

গত কয়েকদিন সেই টাকা দিতে পারেনি সে। জানা গেছে এই শনিবার সাপ্তাহিক বেতন পায়নি সে। গতকাল সূর্য যখন তার কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল তখন সেই ব্যক্তি তাকে পথে ধরে এবং তার সমস্ত টাকা ছাড়িয়ে নেয়। অপমানেই বাড়ি ফিরেছিল ছেলেটি। মনমরা হয়ে বসেছিল। এরই মধ্যে বাবা মদের টাকা চেয়ে বসে। স্বাভাবিক ভাবেই টাকা দিতে পারেনি সে। এই নিয়ে বুধু মল্লিক চিৎকার চেঁচামেচি করে। কিন্তু সূর্য কিছুই বলেনি।

কান্নায় ভেঙে পড়ে কাজল বলেছেন, ” বাড়ি ফিরে এসে মনমরা হয়ে বসেছিল সে। বাবার গালাগালি স্বত্ত্বেও মুখ খোলেনি। আমি জিজ্ঞেস করলে সে সব কথা খুলে বলেছিল। রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়ে সূর্য। এরপর ভোরবেলায় জানতে পারি ছেলে আমার আত্মহত্যা করেছে।”
কাজলের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধু মল্লিক কে জিজ্ঞসা করার জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি সূর্যের টাকা ছাড়িয়ে নিয়েছিল তাঁর খোঁজ করছে পুলিশ। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular