নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা যদিও বা রক্ষা করে রেহাই দেয়না কালাচ বা কাল চিতি। বুধবার গভীর রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বিষাক্ত সাপের দংশনে জর্জরিত হয়ে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হলেন এক পরিযায়ী শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে দাসপুর ১ ব্লকের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের যদুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। আক্রান্তের নাম বিশ্বজিৎ খাঁড়া। ২৬বছরের বিশ্বজিতের বাড়ি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার লাগোয়া গ্রামেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ওই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রয়েছেন প্রায় ১২জন পরিযায়ী। ২৩মে এখানেই কোয়ারেন্টাইনে আসেন গুজরাট থেকে আগত ২ ভাই অভিজিৎ ও বিশ্বজিৎ খাঁড়া। গত প্রায় ৫ বছর ধরে গুজরাটে স্বর্ণশিল্পী হিসাবে কাজ করে আসছেন তাঁরা। লকডাউন চলার পর আটকে পড়েন ২মাস। এরপর লকডাউন শিথিল হলে অন্যদের মত তাঁরাও ফেরেন। দুই ভাই যদুপুর গ্রামেরই বাসিন্দা। করোনা সংক্রমন এড়াতে দুজনকে অন্যদের সাথে ওই স্কুলেই কোয়ারেন্টাইন করা হয়।
অভিজিৎ জানিয়েছেন, “মেঝেতেই বিছানা পেতে শোয়ার ব্যবস্থা এখানে। সেই মত সবার সঙ্গে আমরা দুই ভাইও শুয়ে ছিলাম। বুধবার প্রচন্ড গরম ও সঙ্গে তীব্র অর্দ্রতায় ঘুম আসছিলনা। দুজনে অনেকক্ষন শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলাম তারপর কখন চোখ গেছে জানিনা হঠাৎই ভাইয়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। ও বলে কিছু একটা কামড়েছে ওকে। টর্চ জ্বেলে দেখতে পাই বিছানা ঘেঁষেই রয়েছে একটি পূর্ন বয়স্ক কালাচ সাপ। সাথে সাথে খবর দেই বাবাকে।” খবর পেয়েই অভিজিৎ বিশ্বজিতের বাবা মানিক চলে আসেন। মোটর বাইকে করে বিশ্বজিৎকে প্রথমে দাসপুর হাসপাতালে পরে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার।
ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তাঁরা বলেন করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এঁদের রাখা হয়েছে তা এই ঘটনার প্রমান। স্থানীয় প্রাক্তন শিক্ষক অরূপ রতন মিশ্র বলেন, “আশেপাশে ঝোপঝাড়ে ভর্তি। আবর্জনার স্তুপ হয়ে রয়েছে। এরা কী অবস্থায় রয়েছে তা দেখতেও আসেনা স্বাস্থ্যকর্মী প্রশাসনের লোকেরা। অবিলম্বে এঁদের এখান থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হোক অথবা জায়গা পয় পরিস্কার করা হোক।”
দাসপুর ১ ব্লকের বিডিও বিকাশ নস্কর জানিয়েছেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের আশেপাশের ঝোপঝাড় কেটে ফেলার সাথে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা দেখা হচ্ছে।”
ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে বিশ্বজিৎয়ের আ্যন্টি ভেরাম চালু হয়েছে। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে সে। এদিকে আতঙ্কে রয়েছেন ওই কেন্দ্রের বাকি পরিযায়ীরা। গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিনবঙ্গে কালাচের উপদ্রব বেশি এবং প্রতিবছর যে সমস্ত সাপের কামড়ে প্রান যায় তারমধ্যে কালাচের ভূমিকা যথেষ্টই। সর্পবিশারদরা বলছেন আরও মারাত্মক হল কেউটে বা গোখরো সাধারন ভাবে ঘরে ঢুকে পড়েনা অন্যদিকে কালাচের স্বভাব আবার উলটো। মানুষের ঘর গেরস্থলির দিকেই তার বেশি ঝোঁক। অত্যন্ত গরমে সে বিছানা ঘেঁষে এমনকি বিছানাতেও ঢুকে পড়ে মাটির উত্তাপ থেকে রেহাই পেতে। তাই সর্প বিশারদদের পরামর্শ মশারি টাঙিয়ে শোয়ার জন্য আর টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা রাতেই সাপটিকে মেরে ফেলে।