নিউজ ডেস্ক: প্রতিদিনই অন্ততঃ ২বার ভিডিও কল করে আট মাসের ছেলেটিকে দেখা চাই। কাজে যাওয়ার আগে আর কাজ থেকে ফিরে ২বছরের বিবাহিতা স্ত্রীকে বলতেন ভিডিও কল করতে তারপর ছোট্ট পুচকেটাকে প্রানভরে দেখা আর স্ত্রীর সাথে খুনসুটি। তবে ইদানিং আর স্মার্ট ফোনে ছেলেকে দেখে মন ভরছিলনা। বলেছিলেন, কদিনের মধ্যেই যাব পুচকেটাকে দেখতে। এলেন তবে জীবিত অবস্থায় নয়, ভুটান সরকার কফিনবন্দী করে শিলিগুড়ির বাড়িতে পৌঁছে দিল অংশুর নিথর দেহ। আর তারপর থেকেই শোকে পাথর পরিবারের ও প্রতিবেশীরা।
ভুটানে নির্মীয়মান সেতু ভেঙে মৃত্যু হয় ৩১ বছরের সিভিল ইঞ্জিয়ারের অংশু মজুমদারের। বাড়ি ২২ নম্বর ওয়ার্ডের শিলিগুড়ি গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক সংলগ্ন এলাকায়। সেখানেই অংশুর দেহ ভুটান থেকে এসে পৌঁছাতে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পাড়া। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই বিনিদ্র রাত যাপন করছেন তাঁরা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি চুখা-দামচু-হা’র নির্মীয়মান সেতুটি ভেঙে পড়ে। সূত্রের খবর, সেসময় অন্যদের সঙ্গে সেতুর কাজ করছিলেন অংশু। দুর্ঘটনার পর নিখোঁজদের খোঁজ শুরু হয়। এরপরই অংশুর দেহ উদ্ধার হয়। ২০১৬ সাল থেকেই ভুটানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের বাসিন্দা অংশু মজুমদার।তার বয়স মাত্র ৩১ বছর। বাড়িতে রয়েছে বাবা, মা, স্ত্রী ও ৮ মাসের শিশু।
শিলিগুড়ি গভর্নমেন্ট পলিটেকনিক থেকে পড়াশোনা শেষে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
আকস্মিক তার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যাওয়ায় শোকে পাথর অংশুর পরিবার। ভুটানের পারো এলাকায় খুব কম সময়ে যাবার জন্য দামচু হা রোড যাওয়ার রাস্তায় ২০৪ মিটার দীর্ঘ সেতু তৈরি হচ্ছিল। মঙ্গলবার আচমকা ভেঙ্গে পড়ে সেতুটি।অংশু মজুমদারের পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে কোচবিহার ঘোকসাডাঙ্গার বাসিন্দা ২০ বছরেল গৌতম দেব সিং এবং কোচবিহার মাথাভাঙ্গার নিবাসী ২২ বছরের জয়দেব অধিকারীর। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় ভারত-ভূটান সীমান্তবর্তী শহর জয়ঁগাতে আনা হয় দেহ।ভূটান ভারতের প্রশাসনিক আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অংশুর পরিবার সূত্রে খবর,বুধবার সকালে তারা বিষয়টি জানতে পারেন।অংশু আর নেই বিশ্বাসই করতে পারছে না তারা।মঙ্গলবার রাতেও অংশুর সাথে কথা হয়েছিল পরিবারের সদস্যদের।কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ফেরার কথাও ছিল তার।তবে তা আর সত্যি হল না। গোটা পাড়া জুড়ে গত আড়াই দিন হাঁড়ি চড়েনি অনেকেরই বাড়িতে। অংশু নেই, অংশু নেই এই হাহাকার যেন ছড়িয়ে পড়েছে পাড়ার অলিতে গলিতে। সেই পাড়াই বৃহস্পতিবার উপচে পড়ল প্রিয় ছেলেটার কফিনের।