নিউজ ডেস্ক: রাজ্য রাজনীতি জুড়ে এখন ছেয়ে আছেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। প্রভাবশালী এই নেতাকে বিভিন্ন অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে, যা সরকারের সাথে তার ক্রমবর্ধমান দূরত্বেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূর্ব মেদিনীপুরে অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারীর ঘাঁটিতে ফ্লেক্স, ফেস্টুন তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে। তবে এবার শুধু নিজের গঢ় নয়, এবার উত্তরবঙ্গেও শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে শারদ শুভেচ্ছা এবং ফ্লেক্স পড়তে দেখা গেল। তাহলে কি রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ক্রমাগত গোটা রাজ্য জুড়ে নিজের অনুগামীদের দিয়ে আলাদা দল গঠন করতে শুরু করে দিলেন! আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত রবিবার থেকে জলপাইগুড়ি শহর জুড়ে ফ্লেক্স দেখা যাচ্ছে, যেখানে কোথাও তৃণমূল কংগ্রেস লেখা নেই। শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থকবৃন্দের তরফে দুর্গাপূজা এবং কালীপূজোর শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তাহলে কি তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের কাছে স্পষ্ট যে, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছে! আর তাই পূর্ব মেদিনীপুরের বাইরে বেরিয়ে এবার উত্তরবঙ্গে শুভেন্দুবাবুর অনুগামীরা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ছবি লাগিয়ে অন্য কোন বার্তা দিতে চাইলেন! কে বা কারা শুভেন্দু অধিকারীর নামে এই পোস্টার সাটালো!
একটি সূত্রে জানা গিছে, জলপাইগুড়ি জেলায় শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের মধ্যে অন্যতম জেলা তৃণমূলের নেতা বুবাই কর। বর্তমানে সেই বুবাই করকে জেলা তৃণমূলের যুগ্ম-সম্পাদক করা হলেও দলের কোন কর্মসূচিতে তাকে দেখা যাচ্ছে না। তাই এই ফ্লেক্স টাঙ্গানোর পেছনে বুবাই বাবুর মত তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা জড়িত বলে দাবী একাংশের। যেখানে দলের কোন নাম নেই, প্রতীক নেই, শুধুমাত্র শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে এই প্রচার করা হচ্ছে কেন!
এদিন এই প্রসঙ্গে বুবাই কর বলেন, “জননেতা শুভেন্দু অধিকারী জনতাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। তার জন্য দলের কোন ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয় না। কোন পদ লাগে না।” তবে শুধুমাত্র শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে এই শুভেচ্ছাতে যে জেলা নেতৃত্ব অনেকটাই চাপে পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিন এই প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যানী বলেন, “কেউ কারও নেতার প্রচার করতে পারে। তবে এখন যা অবস্থা, তাতে অল্প খরচেই পেশাদার লোক দিয়ে ফ্লেক্স লাগিয়ে দেওয়া যায়। সমর্থকবৃন্দ লেখা মানেই অনেক সমর্থক ফ্লেক্স টাঙাচ্ছেন, এমন কিন্তু নয়। আর সমর্থন কিন্তু তৃণমূলের ঘাসফুল প্রতীকে আছে। আপসহীন সংগ্রামের সেই ঘাসফুল প্রতীক না থাকলে কোন সমর্থন আর সমর্থক থাকবে না।”
আর কেবলমাত্র জলপাইগুড়িতেই যে এমন ফ্লেক্স পড়েছে, তা কিন্তু নয়। দার্জিলিং জেলার শহর শিলিগুড়িতে শুভেন্দু অধিকারীর ব্যানার ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে জল্পনা। ‘আমরা গর্বিত আমরা দাদার অনুগামী’ এভাবেই দলীয় প্রতীক ছাড়াই শুভেন্দুর ব্যানার শহরের বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ্য করা যায়। আর এ নিয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি রঞ্জন সরকারের কাছে এই নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি এই বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দিতে চাননি। তাঁর স্পষ্ট জবাব, “আমাদের দল তৃণমূল কংগ্রেস, আমদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দদের ছবি লাগানো, তাদের জিন্দাবাদ করা এটা নতুন কিছু নয়। আগে থেকেই হয়ে আসছে এমনটা। এটা নিয়ে এত মাতামাতি করার কিছু নেই। আর দলীয় কাজ ছাড়া আমাদের কোনও নেতা-মন্ত্রী যদি মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছাড়া নিজের ছবি ব্যবহার করে শুভেচ্ছা বার্তা জানায়, এতে অন্যায় কিছুই নেই।“
অতএব জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতির বক্তব্যে যেমন পরিষ্কার যে, শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে যে বা যারা এই পোস্টার টাঙিয়েছেন, তা নিয়ে তৃণমূল কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে। তেমনই দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্যে এটাও স্পষ্ট যে, এই বিষয়টিকে তারা অতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তবে যেভাবে নিজের ঘাঁটির বাইরে বেরিয়ে উত্তরবঙ্গেও শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে এই ফ্লেক্স বা ব্যানার পড়তে দেখা গেল, তাতে তৃণমূলের অন্দরে চাপ যে ক্রমশ বাড়ছে, সেই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের কোনও দ্বিমত নেই।