Homeএখন খবরনন্দীগ্রামের সেই হাজরাকাটাতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে শুভেন্দুর ফ্লেক্স

নন্দীগ্রামের সেই হাজরাকাটাতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে শুভেন্দুর ফ্লেক্স

নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন মল্ল যুদ্ধ শুরুর আগের মহড়া। ২০২১ য়ে মহা রণ আর তার আগে শুরু মহড়া কিন্তু তারও আগে আরেক যুদ্ধ বাংলায়। আর সে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই, প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারী বনাম শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী। বুধবার তমলুকের নিমতৌড়ি আর বৃহস্পতিবার রামনগরে সভা শুভেন্দু অধিকারীর। বলাবাহুল্য আগের সভাগুলোর মতই এই দুটি সভা থেকে কিছু ইঙ্গিত মিলবে, ইঙ্গিত দলের মধ্যে থাকা তাঁর বিরোধীদের সম্পর্কে তাঁর মনোভাবের আর তার ঠিক আগেই তাঁরই গড় নন্দীগ্রামে তাঁর ফ্লেক্স টেনে নামিয়ে ফেলে দেওয়া হল। ফেলে দেওয়া হল সেই হাজরাকাটাতেই যেখানে ১০ই নভেম্বর তাঁরই সভার পাল্টা সভা করে গেছিলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

১০ই নভেম্বর নন্দীগ্রাম দিবসে জমি আন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন সভা হয়েছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি তথা শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা অরাজনৈতিক সভা ভিড়ে টেক্কা দিয়েছিল তৃণমূলের ডাকা হাজরা কাটার শহীদ স্মরণের ফিরহাদ হাকিমের সভা কে। শুভেন্দুর ছবি সম্বলিত ফ্লেক্স আর ব্যানারে ভরে গিয়েছিল হাজরাকাটাও। সোমবার রাতের অন্ধকারে সেই সব ফ্লেক্স কেউ বা কারা ছিঁড়ে নামিয়ে মাটিতে, ঝোপে ঝাড়ে গড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।

শুভেন্দু নন্দীগ্রাম থেকে জিতে আসা বিধায়ক শুধু নন, কাঁথির পর নন্দীগ্রাম তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি বলা চলে। তাঁর অসংখ্য অনুগামী এই নন্দীগ্রামে। আমফান বিদ্ধস্ত এই নন্দীগ্রামে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ যা শেষ অবধি তৃনমূল বিরোধী ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়েছে। সেই ক্ষোভ এতটাই তীব্র যে তৃণমূলের হয়ে যদি ফের এই এলাকা থেকে শুভেন্দুও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তবে বড়সড় চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে তাঁর জন্য। ক্ষতিপূরণের সেই ক্ষোভ শুভেন্দু কিছুটা হলেও প্রশমিত করেছেন পরবর্তী কালে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়ে, ব্যাপক ব্যক্তিগত স্তরে ত্রাণকার্য চালিয়ে আর বাকি ক্ষোভ প্রশমিত হয়েছে তৃনমূল থেকে নিজস্ব দূরত্ব তৈরি করে।

তৃণমূল বর্তমানে বিভাজিত নন্দীগ্রামে। স্থানীয় প্রশাসনিক ক্ষমতায় থাকা এবং দলের নেতৃত্বে থাকা অংশ শুভেন্দুর সাথে আর বাকি অংশ শুভেন্দু বিরোধী এবং তাঁদের মাথায় রাজ্যের হাত। এঁদের সঙ্গে নিয়েই হাজরাকাটায় ফিরাদ হাকিমের সভা হয়েছিল। শুভেন্দুর সঙ্গে থাকা অংশ শুভেন্দুর সাথেই দল থেকে চলে যাবে এবং বেরিয়েই প্রত্যঘাত হানবে এই আশঙ্কায় রয়েছে তৃনমূলের শুভেন্দু বিরোধী অংশ। সেই অংশই এই ব্যানার ছেঁড়ার পেছনে রয়েছে বলে শুভেন্দু অনুগামীরা মনে করছেন।

যে কেউই এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক না কেন তিনি যদি দলের কেউ হয় তবে দলীয শৃঙ্খলা মেনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেঘনাথ পাল। তিনি বলেন, “রাতের অন্ধকারে যে বা যারা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ছবি সম্বলিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে তারা রীতিমতো ঘৃণ্য কাজ করেছে। আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। অভিযুক্তরা যদি দলীয়কর্মী হয় তবে তাদের দলের তরফ থেকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তবে গোটা নন্দীগ্রাম জুড়ে এই ঘটনা না ঘটলেও কেন কেবলমাত্র হাজরা কাটাতেই শুভেন্দু বাবুর পোস্টার ছাড়া হল তা আমরা দলীয়ভাবে ও খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি।”

স্থানীয় রাজনীতিকদের মতে এই ফ্লেক্স ছেঁড়া আসলে আসন্ন বিধানসভা লড়াইয়ে নন্দীগ্রাম জুড়ে শুভেন্দু অধিকারী বনাম শুভেন্দু বিরোধীদের তীব্র সংঘাতের আগাম মহড়া। শুভেন্দু যে নতুন শক্তি হিসাবে আত্ম প্রকাশ করতে চলেছেন এবং তাঁকে যে কোনও মূল্যে দমানোর মহড়া এই নন্দীগ্রামের মাটি থেকেই করার কাজটি শুরু হল। এরপর সর্বত্রই এই ঘটনা দেখা যাবে খালি তাঁর দলগত অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার অপেক্ষা।  যত দ্রুত শুভেন্দুর ফ্লেক্স ছড়িয়ে দিয়েছে তাঁর অনুগামীরা ঠিক ততটাই দ্রুততার সঙ্গে তাঁর ফ্লেক্স নামানোর  প্রচেষ্টা এবার শুরু হবে। নন্দীগ্রামে সেই কাজটা শুরু হয়ে গেল।

RELATED ARTICLES

Most Popular