অশ্লেষা চৌধুরী: সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাম ছেড়ে রামেই ভিড়লেন অশোক ঘনিষ্ট বাম নেতা শঙ্কর ঘোষ। কৈলাসের হাত ধরে পদ্ম শিবিরে পা রাখলেন শঙ্কর। সেই সাথেই লাল শিবিরের সাথে দীর্ঘ ৩০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করলেন বাম নেতা। সিপিএম ছাড়ার কারন হিসাবে বলেছিলেন দলে দমবন্ধ হয়ে আসছিল তাঁর। সেই দম অবশেষে বোধহয় খুঁজে পেলেন বিজেপিতেই। দম নিতেই বিজেপিতে ভিড়লেন অবশেষে।
মঙ্গলবার তিনি দলের জেলা সম্পাদকের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন। আর বুধবারই দলত্যাগের কথা সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট করেছেন শঙ্কর ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, সিপিএমের অন্দরে সংখ্যাধিক্যের আড়ালে ভিন্ন মতকে উপেক্ষা করা হয়। দু’তিন জন নেতা মিলেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন। বিরুদ্ধ মতের কোনও স্থান নেই। প্রশ্ন করলেই চার দেওয়ালের ভেতরে অসম্মানিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রতি পদে।
এছাড়াও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টকে বাম-কংগ্রেস জোটে স্থান দেওয়াটাও ভুল বলে দাবী করেন তিনি। বিমল গুরুং নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের ভুমিকার সমালোচনার পরিবর্তে সিপিএম মৌনব্রত পালন করেছে বলেও পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন সিপিআইএম নেতা জীবেশ সরকার।
এদিকে দল ছাড়ার পরেই তবে কি শঙ্কর ঘোষ বিজেপিতে যোগদান করছেন? সেই নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে। আর এমন জল্পনার মাঝেই বৃহস্পতিবার শঙ্করের অসুস্থ মাকে দেখতে শিলিগুড়ি মাটিগাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গেলেন দার্জিলিং-এর সাংসদ রাজু বিস্তা। পাহাড়ের বিজেপি সাংসদের এভাবে দলত্যাগী বাম নেতার মাকে দেখতে বেসরকারি হাসপাতালে হাজির হওয়ায় সেই জল্পনা যেন আরও বেগ পায়। যদিও এব্যাপারে এখনও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেনি গেরুয়া বা লাল কোনও শিবিরই।
তবে পদত্যাগ বা বহিষ্কার যাই হোক না কেন, লাল শিবিরের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হওয়ার পরের দিনই হাসপাতালে গিয়ে শঙ্কর ঘোষের মায়ের সাথে রাজু বিস্তার দেখা করা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। জানা যাচ্ছে সেখানে বেশ কিছুক্ষণ শঙ্করের সাথেও কথা বলেন রাজু বিস্তা। পাশাপাশি শুক্রবারেই শিলিগুড়িতে পা রেখেছেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কৈলাসের এইভাবে আচমকাই শিলিগুড়িতে পা রাখায় গুঞ্জন ওঠে, শিলিগুড়ি হিলকার্ট রোডের একটি বিলাসবহুল হোটেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন প্রাক্তন এই বাম নেতা। শুধু তাই নয়, ওনাকে বিজেপির টিকিটও দেওয়া হতে পারে বলেও খবর। আর এই গুঞ্জন যদি সত্যি হয়, তবে দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সিপিএম করা শঙ্কর ঘোষের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ফলে শিলিগুড়িতে বামেদের যে শক্তি খর্ব হতে চলেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। অবশেষে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েই দিলেন বাম নেতা।