ক্ষিরাই: বাংলার গুলবাগিচা-২মীর হাকিমুল আলি
গত সংখ্যায় আপনাদের ক্ষিরাইয়ের পশ্চিম পাড়ের কথা বলেছিলাম। এবার আপনাদের নিয়ে যাবো ফুলের স্বর্গে, ক্ষিরাই এর আর এক জায়গায়।যেখানে কিছু অন্য ধরণের ফুলের চাষ । আর এক অপূর্ব সৌন্দর্য্যের সাথে অনন্য অনুভূতি।
সূর্য তখন মধ্য গগনে ।রোদে চারদিক ঝলমল করছে ।আর গরম ও লাগছে বেশ। অমিত দার গাড়িতে চড়ে চললাম বামদিকে কাঁসাই নদী ফেলে। কত গুলো ফুলের নার্সারি পেরিয়ে কিছুটা যাওয়ার পর বাম দিকে তাকিয়ে আমার তো চক্ষু চড়ক গাছ।এতো সাদা হয়ে কি ফুল এসব !
এরকম প্রশ্নের সাথে বিস্ময় দেখা দেওয়ার সময়ে অমিত দা গাড়ি থামালেন l নেমে গিয়ে ফুলের জমির দিকে সত্বর গতিতে চললাম l চারদিক টা এখন ভালোভাবে প্রতিভাত হলো l চারদিক কে যেন লাল সাদা সবুজ রঙ ছিটিয়ে রেখেছে l মৃদু হাওয়ায় মাথা নাড়ছে লক্ষ্য লক্ষ্য ফুল l আমার চোখের পাশাপাশি মন ও জুড়িয়ে গেল এরকম নৈস্বর্গিক পরিবেশে l আমার মন টা নেচে উঠলো l আমি অবশ্যই নাচিনি l ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম l তারপর এদিক সেদিক ছুটতে লাগলাম জমির আল ধরে l
এক কোমর ফুলের সমুদ্রে ডুবে আছি l যত এগিয়ে যাই ততো আরও বড়ো বড়ো ফুল l নানা রকম ফুল l বলে রাখি এই দিকটাই সেন্টারিয়া কর্ণ ফ্লাওয়ার, গ্ল্যাডিওলাস, ক্রিসেনথিমাম, গোলাপ, আরও কয়েকটি ফুলের জাত যাদের নাম আমি জানিনা ইত্যাদি ফুলের সমারোহ l ক্রিসেনথিমাম ফুলের তিনটি রঙ এখানে দেখলাম -সাদা, গোলাপি, হলুদ l এছাড়া কর্ণ ফ্লাওয়ার নানা রঙের l ক্রিসেনথিমাম ফুল এর পাপড়ি মেলার সময় টা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য রাতে আলো জ্বালিয়ে রাখা হয় গোটা জমিতে l নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয় l তাই এই ফুল চাষ বেশ ব্যয়বহুল l আর এক জায়গায় দেখলাম গোলাপি ক্রিসেনথিমাম ফুলের জমিতে ওপরে ছায়া দেওয়ার জন্য সামিয়ানা টাঙানো আছে l কারণ টা চাষী ভাইকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে রঙ টা যাতে খুব ফেকাসে না হয়ে যায় তাই এই ব্যবস্থা l
এই দিকটা অর্থাৎ নদীর পূর্ব দিকের জমির(গ্রামের নাম মহৎ পুর ) সন্ধান খুব কম পর্যটক পেয়েছেন l তাই এখানে লোকের ভীড় নেই বললেই চলে l কেবল জমির মালিক কয়েকজন চোখে পড়লো l তাই এই ফুল জমিগুলি বেশ সাজানো গোছানো আছে l তবে এগুলো খুব শীঘ্র মানুষের ভীড়ের মুখে পড়ে এদের সৌন্দর্য্য নষ্ট হবে l
একদিকে গোলাপ বাগান l কিন্তু তখনও গোলাপ ফুল সেভাবে ফুটেনি l আরও কিছুদিন পর ফুলে ভরে যাবে l
এই ভাবে ঘন্টা খানেক থেকে ফেরার মনস্থির করলাম l ফিরবার পথে কাঁসাই নদীর ওপর মধ্য যুগের এক নদী বন্দরের ভনগ্নাবশেষ দেখে বিকেলে পাঁশকুড়া স্টেশনে পৌঁছলাম l খিদে পেয়েছিলো খুব l স্টেশনে মসলা মুড়ি আর পাঁশকুড়া খ্যাত চপ দিয়ে উদর পূর্তি করলাম l তারপর শুনতে পেলাম ফেরার ট্রেনের শব্দ l