নিজস্ব সংবাদদাতা: কোন অভিমান বয়ে কে চলে যায় মনস্বত্ত্বের সেই গভীর গহনে আজও পৌঁছাতে পারেনি মানুষ! পারলে জানা যেত কেন জন্মদিনের ঠিক আগের দিনই আত্মহত্যা করল ক্লাশ নাইনের ছাত্র রথীন মান্না? বাবা মার একমাত্র সন্তান রথীন, সবং থানার খড়িকা হাইস্কুলের ছাত্র ছিল সে। মঙ্গলবার ছেলের জন্মদিন তাই সোমবারই রথীনের খড়িকা গ্রামে এসে গিয়েছিল তার মামাও। সোমবার বিকালে মামাকে নিয়েই রথীনের বাবা মা গিয়েছিলেন বেলদার এক আত্মীয় বাড়িতে, একটি জরুরী কাজে। রাত কাটিয়ে পরের দিনই ভোর ভোর চলে আসার কথা কিন্তু রাত কাটলনা, তার আগেই নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করে রথীন।
খড়িকা গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবী সুকুমার মেইকাপ জানিয়েছেন, ‘ রথীনের মন খারাপ কিংবা সে মুষড়ে রয়েছে এমন কোনও লক্ষনই দেখতে পায়নি পরিবারের লোকেরা। পরিবারের লোক বলতে দাদু ঠাকুমা। রথীনের বাবা শঙ্কর ও মা রীনা রথীনের মামাকে নিয়ে বেলদা গেছিল। শঙ্করের কাকা নিতাই মান্নার মেয়ের বিয়ে হয়েছে বেলদায়। খুড়তুতো বোনের বাড়িতে গিয়েছিল ওরা। একটি বিশেষ কাজে। রথীন সন্ধ্যাবেলায় পাশের এলাকা চাঁদকুড়িতে গেছিল জেঠুর মেয়ের বাড়ি। রাত ৮ টা নাগাদ ফিরে আসে বাড়ি। দাদু ঠাকুমা তাকে রাতের খাবার খেয়ে নিতে বলে কিন্তু সে বলে যে দিদির বাড়িতে খেয়ে এসেছে।”
মেইকাপ বলেন, “এরপর নিজের ঘরে ঢুকে যায় রথীন। দাদু এবং ঠাকুমা টিভি দেখছিলেন। রাত ৯ টা নাগাদ তাঁরা রাতের খাবার খেতে যান। ঘটনাক্রমে রাতের খাবারের একটি পদ রথীনের ঘরেই রেখে গিয়েছিলেন রথীনের মা রীনা এবং শাশুড়িকে বলে গিয়েছিলেন খাবার সময় সেটি নিয়ে গরম করে নিতে। সেই খাবার নিতে এসেই দেখা যায় রথীনের ঘরের দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায় প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে রথীনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ।”
রাতেই ছুটে এসেছেন বাবা মা। আছড়ে পড়েছেন একমাত্র সন্তানের মৃতদেহর ওপর। মাথা খুঁড়ে বার বার প্রশ্ন করেছেন, কেন, কেন, কেন? উত্তর মেলেনি। শঙ্কর জানিয়েছেন, ” সোমবার সকালে বিদ্যুতের তার নিয়ে বারবার নাড়াচাড়া করছিল ছেলেটা। তারের খোলা মুখ কখনও নখ দিয়ে টানছে, কখনও আবার দাঁত দিয়ে কাটছে। ২/৩ বার বারন করেছি, শোনেনি। তখন এক চাটি মেরেছি। কি অন্যায় করেছি বলুন? কোনও বাবা চাইবে বিদ্যুৎ নিয়ে ছেলে খেলা করতে গিয়ে ছেলের অঘটন ঘটুক? একজন বাবা হিসেবে এই টুকু অধিকার নেই যে ও তারজন্য সারাজীবন ও আমাকে আমার কাছেই দায়ী করে চলে গেল? এ কী যন্ত্রনা চাপিয়ে গেল আমার ওপর যা কিনা আমাকে জীবনভর দগ্ধে দগ্ধে কুরে কুরে খাবে। সন্তানকে শাসন করা এতটাই অপরাধের?”
সোমবার রাত থেকেই প্রায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন রীনা। জ্ঞান ফিরলেই হাহাকার করে লুটিয়ে পড়ছেন আবার। থ বনে গেছে খড়িকা, চাঁদকুড়ি আশেপাশের গ্রাম। মঙ্গলবার গ্রামের ছেলের জন্মদিনেই খড়িকার শশ্মানে চিতা সাজিয়েছেন প্রতিবেশীরা। সবাই এসেছেন, এমনকি জন্মদিনে যাঁদের নিমন্ত্রন ছিলনা তাঁরাও! শ্মশানে যে কাউকে নিমন্ত্রন করার দরকার হয়না!