নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যাবৎ কালের নজির বিহীন বিদ্রোহের মুখে পড়তে হল সবংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমান রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভূঁইয়াকে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এক বিক্ষোভের মুখে কর্মসূচি বাতিল করে ফিরে আসতে হল মানস এবং তাঁর স্ত্রী বর্তমান বিধায়ক গীতা ভূঁইয়াকে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভ হলেও সাম্প্রতিক কালে এতবড় জনরোষের মুখে পড়তে দেখা যায়নি মানসকে। পুলিশের হস্তক্ষেপেই এ যাত্রা বড়সড় হেনস্থার হাত রেখে রক্ষা পেয়েছেন সাংসদ। ঘটনার নিন্দা করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর তৃনমূল জেলা সভাপতি অজিত মাইতি।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার সকালে সবং ব্লকের বিষ্ণুপুর অঞ্চলে মাস্ক বিতরন কর্মসূচিতে স্ত্রী গীতা ভূঁইয়াকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন মানস ভূঁইয়া। সঙ্গে পুলিশ ও কয়েকজন দলীয় কর্মী ছিল কিন্ত বিষ্ণুপুর ঢোকার আগেই দেখা যায় রাস্তায় কাঠের গুড়ি ফেলে ধানচারা রোপন করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিজেপির বেশ কিছু কর্মী সমর্থক। তাঁদের অভিযোগ বিষ্ণুপুর ঢোকার আগের তিন কিলোমিটার রাস্তা জলকাদা ও বড়বড় গর্তে ভর্তি হয়ে রয়েছে। সেরকমই একটি জলভর্তি কর্দমাক্ত রাস্তায় ধানের চারা রোপন করে বিজেপির কর্মসূচি চলার মাঝেই এসে পড়েন সাংসদ ও বিধায়ক দম্পতি।
সামনে মানস ভূঁইয়া ও বিধায়ক গীতা ভূঁঞাকে সামনে পেয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জনতা আরও ক্ষেপে যায়। তাঁরা দাবি করে বিধায়ক ও সাংসদকে তাঁরা বিষ্ণুপুরে ঢুকতেই দেবেননা। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গেও ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি কর্মীদের। জনতা দাবি করে ‘ মানস ভূঁইয়া ফিরে যাও, তোমার ঠিকাদাদের দ্বারা উন্নয়ন চাইনা।’ বিজেপির কর্মীদের অভিযোগ মানস ভূঁইয়া বছরের পর বছর ধরে এলাকার বিধায়ক ছিলেন এলাকায় কোনো উন্নয় হয়নি,নিজের স্ত্রীকে গীতা ভূঁইয়া ভোটে দাঁড় করিয়ে ছাপ্পা ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। মানস নিজে জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। জনতা তাঁর দিকে তেড়ে আসে। বাধ্য হয়ে পুলিশের পরামর্শে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে আসতে হয় সাংসদকে।
বিজেপির সবং পূর্ব মন্ডলের সহসভাপতি অজিত মন্ডল দাবি করেছেন, বিজেপির পতাকার নিচে স্বতঃস্ফূর্ত জন বিক্ষোভ এটা। উদ্ধবপুর থেকে বিষ্ণুপুর বাজার তিন কিলোমিটার রাস্তা নরক হয়ে আছে বছরের পর বছর। বারবার বিডিও অফিস স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে বলে কোনও লাভ হয়নি। প্রায় একই অবস্থা সারা বিষ্ণুপুর অঞ্চলের। উন্নয়নখাতে কোনও বরাদ্দ হয়নি এখানে।
বিষ্ণুপুর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি গনেশ মাইতি বলেন, উন্নয়ন হয়নি বিজেপির এই দাবি সত্যি নয়। ৭০লক্ষ বরাদ্দ হয়েছিল এই রাস্তায় কাজও হয়েছে কিন্তু এলাকার আবাস যোজনায় গরিব মানুষের বাড়ি নির্মাণের জন্য চিপস বালি ইট ইত্যাদি বহন করার জন্য এত লরি যায় যে রাস্তা খারাপ হয়ে গেছে, সাংসদ ও বিধায়ক মারফৎ মুখ্যমন্ত্রীকে বলে ফের কোটি টাকা বরাদ্দ করানো হয়েছে শীঘ্রই কাজ হবে।
তৃনমূল জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, এসব বিজেপির কালচার। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এই সব করাচ্ছে স্থানীয় দের দিয়ে কিন্তু এসব করে লাভ হবেনা। মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় তৃনমূলের একাংশ অবশ্য আজকের বিক্ষোভের পেছনে সাংসদকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের বক্তব্য ব্লকে যে সব ঠিকাদার রয়েছে তাঁরা সবাই সাংসদের অনুগামী। উন্নয়নে ১০০টাকা বরাদ্দ হলে ১০টাকা খরচ করে ফলে শুধু বিষ্ণুপুর নয় জনরোষ তৈরি হচ্ছে সর্বত্রই। ওই অংশের আরও দাবি, “আজকে যিনি মানস ভূঁইয়াকে ঘিরে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন সেই অজিত মন্ডলের নেতৃত্বেই বর্তমান পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি গুরুপদ মান্নার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় তাঁর ছেলেকে। সেদিন কিন্তু দলীয় কর্মীর পাশে দাঁড়াননি ভূঁইয়া দম্পতি বরং সেদিন দলের একাংশ মাথায় হাত রেখেছিল মন্ডলের। সেই মন্ডলই আজ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে গেল!” এদিন বিকাল ৫টা নাগাদ ঘুর পথে ফের মানস বিষ্ণুপুর গেছিলেন বলে জানা গেছে। গোটা ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় বিষ্ণুপুর অঞ্চলে।