শশাঙ্ক প্রধান : অন্যের কাছ থেকে জমি নিয়ে ভাগে চাষ করা আর সেই চাষের ওপর সারা বছরের সংসার। স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে সারা দিন জমিতেই পড়ে থাকা। ধানের চারা তৈরি থেকে রোপন, জমিতে সার বিষ দিয়ে বড় করা, ফসল ফলতে শুরু করলে যত্ন নেওয়া, পাহারা দেওয়া আর ধান পাকলে সেই ধান কেটে ঝেড়ে ঘরে তোলা সবই ওই চার হাত। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানা এলাকার দাঁডরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সানচাহারা গ্রামের লাগোয়া সেই পরিবারের ২ বিঘা জমিতেই শেষ অবধি বাজ পড়ে ঝলসে গেলেন স্বামী-স্ত্রী।
প্রানের চেয়ে প্রিয় জমিতেই পাশাপাশি লুটিয়ে পড়লেন দু’জন। সোমবার বিকালের এই মর্মান্তিক ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত দম্পত্তির নাম মোহন ও মানকা মুর্মু । ৪৬ ও ৪৪ বছরের ওই দম্পতি নিজেদের ভাগে নেওয়া জমিতে ধান রোযার কাজ করছিলেন। কদিন ধরেই বিকালের আগেই ঝেঁপে বৃষ্টি হচ্ছে এলাকায়। জমিতে জল জমেছে। প্রকৃতির দেওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করে জমিতে ধান রোযার কাজ করছিলেন।
বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ প্রচুর বৃষ্টির সাথে সাথেই ব্যাপক বাজ পড়ছিল। গ্রাহ্য করেননি দম্পত্তি বৃষ্টিতে ভিজেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁদের প্রায় শরীর ছুঁয়েই পড়ে একটি বাজ। সাথে সাথেই মাঠে লুটিয়ে পড়ে দু’জন।ওই সময় মাঠে আরও অনেক কৃষক। তাঁরা দৌড়ে আসেন। কিছুটা দুরেই বাড়ি। ছুটে আসে সেও। সবাই মিলে একটি গাড়ি জোগাড় করে নিয়ে যায় সবং গ্রামীণ হাসপাতালে।
সেখানেই চিকিৎসকরা দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। গ্রামবাসীদের সঙ্গেই মা-বাবাকে নিয়ে এসেছিলেন ২৫বছরের রাম মুর্মু। ঘটনার পর থেকেই উৎকন্ঠা আর আশঙ্কায় যেন থ হয়ে গেছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা বাবা মাকে মৃত ঘোষনা করলে সেখানেইল অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান তিনি। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে রামের জ্ঞান ফিরে এলেও বাক শক্তি রহিত হয়ে পড়ে রাম।
বেশ কয়েক ঘন্টা কথা বলতে পারেননি রাম। গভীর ট্রমার মধ্যে চলে যান তিনি। চিকিৎসকদের চেষ্টায় পরে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বর্তমানে হাসপাতালেই ভর্তি আছেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে মঙ্গলবার খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে দেহ। ময়নাতদন্তের পরই দুজনের দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে। উল্লেখ্য রাম ছাড়াও ওই দম্পত্তির এক বিবাহিতা কন্যা রয়েছে।