ওপর থেকে নিচে , সেই বাঁচা ও বাঁচানোর ফুটেজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা: ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২০, মৃত্যুর দিনটি প্রায় ঠিক হয়ে গিয়েছিল খড়গপুরের বাসিন্দা নিত্যযাত্রী সুজয় ঘোষের যদি না ধর্মেন্দ্র কুমার ঠিক সময় তৎপর না হয়ে উঠতেন। হাত বাড়িয়ে প্লাটফর্মের তলায় রেল লাইনে তলিয়ে যাওয়া থেকে টেনে আনতেন তাঁকে। পাশ দিয়ে তখন দ্রুতগতি চলে যাচ্ছিল আসানসোল খড়গপুর প্যাসেঞ্জার।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
শুক্রবার রাত ৯টা বেজে ৪০মিনিট মেদিনীপুর রেল স্টেশন কার্যতঃ এক হাড় হিম করা দৃশ্যর স্বাক্ষী হয়ে রইল অবশ্য শেষ পর্যন্ত যা স্বস্তির হয়ে রইল এক রেল সুরক্ষা বাহিনী বা আরপিএফের কনস্টেবলের তৎপরতার জন্য। সেই আরপিএফ যাঁদের কিনা সামান্য এদিক ওদিক হলেই যাত্রীদের কটাক্ষ আর শ্লেষের শিকার হতে হয়।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সুজয় |
শুক্রবার আর পাঁচটা দিনের মতই ৪৪বছর বয়সী সুজয় ঘোষ মেদিনীপুরের নিজের কাজ সেরে খড়গপুর শহরের বারবেটিয়া এলাকায় নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য যখন আসানসোল-খড়গপুর প্যাসেঞ্জার ধরার জন্য মেদিনীপুর স্টেশনের ১নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছান তখন ৬৮০০৪নম্বর প্যাসেঞ্জার পিক আপ নিয়ে স্টেশন ছাড়তে শুরু করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, স্টেশন তথা ১নম্বর প্ল্যাটফর্মের সদর ফটক পেরিয়ে সুজয় যখন দৌড়তে দৌড়তে প্ল্যাটফর্মে এসে ঢোকেন তখন ট্রেনের তিনভাগ জায়গাটা পেরিয়ে গেছে। শেষের দিক থেকে চারনম্বর কামরার হাতলটা কোনও মতে ধরে ফেলেন তিনি আর পা-দানিতে পা রাখার মুহূর্তেই ঘটে যায় বিপত্তি।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ঠিক মত পা রাখতে না পারায় হাত হাতলে থেকে যাওয়ায় ছুটন্ত ট্রেন টানতে টানতে নিয়ে চলে সুজয়কে। একসময় হাতের মুঠিও খুলে যায় হাতল থেকে আর তখনই ভর আর বেগের সমন্বয়ে আড়াআড়ি ৯০ডিগ্রি ঘুরে যায় সুজয়ের শরীর। মাথা ট্রেনের দিকে আর পা সমানুপাতিক উল্টো দিকে। অতঃপর ছুটন্ত ট্রেনের গায়ে তৈরি হওয়া ঘুর্ণায়মান বাতাস সুজয়ের ভারি ওপরের অংশকে নিজের দিকে অর্থাৎ ট্রেনের দিকে টানতে থাকে। অনিবার্য ভাবেই সুজয় চলে যায় প্লাটফর্ম আর ট্রেনের মধ্যবর্তী ফাঁকে, এমনকি গলা সমেত মাথা ঢুকেও যায় মৃত্যু গহরে। বাকি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধান। আর একটি পা দানি আসলেই মাথা গুঁড়িয়ে সুজয়কে থেঁতলে ঢুকিয়ে নিত চাকার তলায়। বাদ বাকি ভবিতব্যটা প্রায় সবারই দেখা। আকছার ট্রেন লাইনে, প্ল্যাটফর্মে দেখা যায়।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
যদিও ওই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মেদিনীপুর স্টেশনে কর্মরত আরপিএফ কনস্টেবল ধর্মেন্দ্র কুমার যাদব। দ্রুত ছুটে গিয়ে ধরে ফেলেন সুজয়ের পা। তারপর প্ল্যাটফর্মের ওপর টেনে তুলে আনেন। মাত্র ২০সেকেন্ডের ব্যবধানে মৃত্যুকে ছুঁয়ে জীবনে ফিরে আসেন সুজয় ঘোষ।
প্রানে বেঁচে গেলেও মাথায় আঘাত লাগে সুজয়ের।আরপিএফ ও রেল পুলিশ, স্টেশন কর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা করার পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠান তাকে। আপাতত তিনি সুস্থ আছেন বলেই জানা গেছে।
সুজয় ও তার পরিবার এমনকি সমগ্র বারবেটিয়া বাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ধর্মেন্দ্র ও আরপিএফ কর্মীদের প্রতি। রেলের তরফেও প্রশংসা করা হয়েছে ধর্মেন্দ্রকে। রেলের এক আধিকারিক বিনীত ভাবে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ট্রেন ছেড়ে দিন, স্টেশনে রাত কাটান, পরের দিন স্ত্রী ছেলে মেয়ে অথবা বাবা-মার মুখটা অন্ততঃ দেখতে পাবেন।