✒️ কলমে: আশিস মিশ্র
আড্ডার জন্য সবসময় চার দেওয়ালের দরকার হয় না। খোলা আকাশের নীচে বসে, অথবা কোনো বটগাছের ছায়ায় বসে আড্ডা হতেই পারে। এমনি একটি রবিবারের হলুদ আড্ডা বছর দুই ধরে চলছে। কখনো সেই আড্ডায় পাঁচ / সাত জন,কখনো বারো/ তেরো জনও হয়ে যায়। প্রতিটি আড্ডায় একজন বক্তা থাকেন। বাকি সবাই শ্রোতা। কে কোন আড্ডায় বক্তা হবেন, তা আড্ডায় বসেই ঠিক হয়ে যায়। বিষয় স্থির থাকে না। সমাজ – সভ্যতা থেকে, ব্যক্তি জীবনের যে কোনো বিষয় নিয়েই বক্তব্য চলতে থাকে। কোনো তর্ক – বিতর্ক নয়। কেবল বক্তার আলোচনাটি উপলব্ধি করাই এই আড্ডার রীতি। কে কে আসেন — তাঁদের নাম আলাদা করে আমি বলছি না। প্রায় সবাই আমার পরিচিত। কেউ আমার জুনিয়র, কেউ সিনিয়র। ব্যাপারটি বেশ মজার। আজকাল এমন আড্ডা যখন অদৃশ্য হয়ে প্রায় সকলে অ্যানড্রয়েডের স্ক্রিনে হাত বোলাচ্ছেন,তখন এই আড্ডায় গেলে মনের খোরাক পাওয়া যায় বইকি।
হলদিয়ার ভবানীপুর থানার সামনে ৪১ নং জাতীয় সড়কের পাশে সেই বটগাছের বাঁধানো বেদীর ওপর এই আড্ডা বসে। পুলিশ – প্রশাসনের লোকজনও মাঝে মাঝে সেখানে আসেন। আড্ডা শেষে চাঁদা তুলে রাতে একটু ডাল- ভাতের জোগাড় হয়। বর্ষাকালে খিচুড়ি।
সম্প্রতি একটি আড্ডায় এমন কিছু আলোচনা করলেন এক বক্তা,তার নির্যাসটি এরকম। — পৃথিবীতে মানুষের দুটি জাত। মানে পন্ডিত থাকলে মূর্খও থাকবে। ব্রাহ্মণ থাকলে অব্রাহ্মণও থাকবে। ধনী থাকলে দরিদ্রও থাকবে। সুখী থাকলে দুখীও থাকবে। পদার্থ থাকলে অপদার্থও থাকবে। ক্ষমতাবান থাকলে ক্ষমতাহীনও থাকবে।
এখন কথা হচ্ছে, এই জগৎ পদার্থময়। পদার্থ নিয়ে, পদার্থের অবস্থা নিয়ে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর গবেষণা চলছে। পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার কথা আমরা জানি। পদার্থের গতিশীল কথাও জানি। প্রতিনিয়ত সে গতিশীল। ব্রহ্মান্ডের আকার বেড়েই চলেছে। এখন কথা হচ্ছে, পদার্থের পঞ্চম অবস্থাটির আবিষ্কার সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, সেদিন এই মহাজগতে এক সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটবে। সেই অবস্থাটি হচ্ছে পদার্থের ” ডার্ক এনার্জি “।
মহাজাগতিক সেই ডার্ক এনার্জি আবিষ্কারের দিকেই এখন বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য। কী সেই ডার্ক এনার্জি, তা আবিষ্কার হলে মানব সভ্যতায় কী বৈপ্লবিক ঘটনা ঘটবে, তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এই আবিষ্কারের জন্য যখন বিজ্ঞান সাধকেরা নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন, তখন আমাদের মহাজগতের নানান ঘটনার দিকেই মন দিয়ে রাখতে হচ্ছে।
আড্ডায় আরও যে প্রসঙ্গটি উঠে এলো– তা হলো,কোভিড ১৯। করোনা ভাইরাসের আগেও পৃথিবীতে যে সব ভাইরাস ঘটিত বিপর্যয় হয়েছে, আস্তে আস্তে সেই সব ভাইরাসকে মানুষ মোকাবিলা করেছে। এ ক্ষেত্রেও মানুষ মোকাবিলা করছে। সমস্ত ভাইরাস জেনেটিক্যালি পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন দেশে মানুষের জীবনাচরণ যেমন, সেখানে তেমন করে সে প্রভাব বিস্তার করেছে। এবং আস্তে আস্তে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পরিবর্তিত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে। এবং মানুষের শরীরে প্রাকৃতিক নিয়মেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাবে। এবং এটাই হয়। সবই প্রাকৃতিক নিয়মের ভেতরেই ঘটতে থাকে। যেমন, ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছও প্রাকৃতিক নিয়মে তার ভেঙে যাওয়া শরীর থেকে পাতা গজানো শুরু করে। তেমনি প্রাকৃতিক নিয়মেই করোনা ভাইরাস একসময় আর মানুষকে মেরে ফেলতে পারবে না। মানুষই প্রাকৃতিক নিয়মে এবং ওষুধ আবিষ্কারের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করে ফেলবে। এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকবো আমরা। যেহেতু করোনার বিশ্বত্রাসের মধ্যে মানুষ রয়েছে, তাই বিভিন্ন দেশের মানুষ তার মোকাবিলায় যেখানে যেমন, সেখানে তেমন ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছে। সামাজিক বিধিও মেনে চলেছে। আস্তে আস্তে ওই ভাইরাসের মারণশক্তির পরাজয় ঘটবেই ঘটবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে
এত বছর ধরে এতো কিছুর মোকাবিলা করেছে একমাত্র মানুষই। অতএব প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যেই মানুষের জীবনের জয়যাত্রা অটুট থাকবে। যেমন করে এক একরকমের মানুষ নেপোটিজমের শিকার হয়েও তার কর্ম জগতে সাফল্যকে ধরে রাখতে সক্ষম, তেমনি পাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে মানুষকেই তার রণকৌশল ঠিক করতে হয়।
(চলবে)