✍️কলমে: আশিস মিশ্র
(পর্ব –২২)
ছেলেবেলার সেই দিনগুলো কতো বদলে গেছে। দীপাবলির আগে মাটির তাল জোগাড় করা। তারপর বেশ কয়েকটি প্রদীপ বানিয়ে তা কয়েক দিন রোদে শুকনো করা। তারপর কলের পোড়া মবিল জোগাড় করা। দীপ জ্বালানোর স্ট্রাকচার বানানো। এই সব কাজ ঠিকঠাক হলো কিনা,তার জন্য পাড়ার বাচ্চাদের একটি দল তৈরি হতো। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে তা ঠিক করে আসা৷ মোমবাতি জ্বালানো যেন ছিলো বিলাসিতা।
এরপর বাবা বা মায়ের জমানো খুচরো পয়সা গোপনে বের করে নিয়ে বুড়িমার চকোলেট বোম কেনা। জানতে পেরে বকুনি খাওয়া। এইসব ছিলো বেশ মজার ঘটনা।
মাঝে মাঝে কালী পুজোয় বৃষ্টিও হতো। তখন বেশির ভাগ গ্রামের রাস্তা ছিলো মাটির। এখন তো সব ক্রংক্রিটের। সেই মাটির রাস্তায় টলমল পায়ে মন্ডপে যাওয়া। বাজি পোড়ানো শেষ হলে অনেক রাতে বাড়ি ফেরা। আবার ভোর হতেই দীপ জ্বালানো ও বাজি পোড়ানোর ধুম পড়তো পাড়ায় পাড়ায়। কার পটকার আওয়াজ বেশি, তা নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে ছুটোছুটি। প্রবল চিৎকার সব বাচ্চাদের। তারমধ্যে শুক বাঁধানো ও গোয়াল পুজো। আঁকের বাড়ি হাতে কুলো নিয়ে বেরিয়ে মশা তাড়ানো। ছড়া আওড়ানো। ‘ ধারে মশা ধা/ নল বনকে যা..’।
চতুর্দিকে পটকার তীব্র আওয়াজ। আস্তে আস্তে তা বন্ধ হয়ে যেত। এবার ভাইফোঁটার ধুম।
ব্যস,কাল থেকে স্কুল চলো। প্রায় এক মাস বইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। শীতের সেই সব দিন, কুয়াশামাখা চাঁদ, শিশিরের শব্দ, সব যেন ঠিকঠাক চলছে। আর এখন সেই সব দিনের স্বাদ থেকেও যেন আমাদের পরের প্রজন্ম তা ঠিক পেতে চায় না।
এখন তাদের চাই ইলেকট্রনিক বাল্ব। মোমবাতি না হলেও হয়। বাজিপটকার নেশা বাড়লেও তার মাত্রা কমেছে। কোভিদ আবহে এবার দীপাবলি যেন এসেও আসেনি মনে হয়। পুজোর বাজারও ঝিমিয়ে গেছে। তবুও দীপাবলি, ভূতচতুর্দশী, ধনতেরস রয়েছে। ভাইফোঁটাও হবে কোথাও মুখোমুখি। কোথাও অনলাইনে। সোশ্যাল মিডিয়া যুগে যখন সবাই ব্যস্ত,তখন সবটাই যেন ডিজিটাল হয়ে গেছে। তাই এখন দীপাবলির হলুদ গায়ে মেখে পুকুরে স্নান করে ত্বক পরিস্কার করার কথা ভুলেই গেছি আমরা। ছুটির আমেজও কতো বদল। সেই সব হলুদ রবিবার এখন আর হলুদ নেই। তার কতো রং এখন। কোনটা ধরবো তা নিয়ে অত মাথাব্যথা নেই। ছেলেবেলার রংমিলান্তি যে চিরকাল সমান থাকে না।
( চলবে)