✍️কলমে: দীপ মুখোপাধ্যায়
(পর্ব–১১)
যাঁরা যৌবনকালের প্রেমপর্বের জন্য নিয়মিত প্ররোচনা দিচ্ছেন তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি আমার অকিঞ্চিৎকর প্রচেষ্ঠা সত্ত্বেও নারীসঙ্গ কখনও প্রেমপর্যায়ে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়নি। কিশোরবেলা থেকেই টের পেয়েছি প্রেমিক হওয়াটা বেশ অধ্যাবসায় সাপেক্ষ। তবে এখন সেই অসারগর্ভ চর্চার চমকপ্রদ বিবরণের ফলশ্রুতি মানহানির দিকেই গড়াবে। ধরা যাক আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে, রূপের বিদ্যুচ্ছটা মাখিয়ে চিন্তাকাশ আলোকিত করলো কোনও এক কিশোরী। যেন ফুলগাছের কুঁড়ির মতো। তখন অন্তরে তথা অবচেতনে সে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।মহাবলিষ্ট ভাষায় তাকে প্রেমপত্র দেওয়াই কাল হলো।বিশ্লেষণী আয়ুধের অভাবে পত্রটি সে তার মায়ের হাতে তুলে দেয়। বয়ঃপ্রাপ্তা না হবার কারণে তাকে অভিভাবকরা সেই মহতী লেখনীর মর্ম বোঝানো সমীচীন মনে করেননি। তবে প্রেমরসের সেই সুভাষিতাবলী তার মায়ের কাছে রসোত্তীর্ণ প্রতীয়মান হয়েছিল। সেই কিশোরীর সঙ্গে তারপর অবধারিত বিচ্ছেদ। আমিও বহু দ্বিধায় সেই বিরহ সংবরণ করেছিলাম। আমার প্রত্যাখ্যাত অদম্য পৌরুষ শেষবারের মতো আস্বাদ নিয়েছিল ফুলকুঁড়িটির দিকে,শুধুমাত্র তাকিয়ে। ওর মিষ্টি হাসি, কান্না জমাচ্ছিল আমার বুকে। আমার চোখের জলের উষ্ঞতা কুঁড়িটিকে হয়তো স্পর্শ করেনি। মনের আকাশে তখন কালো মেঘ। বৃষ্টিও নামল অঝোর ধারায়। সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আমার ভেতরেও বৃষ্টি নেমেছে। বৃষ্টিফোঁটায় বিবর্ণ হয়ে গেল প্রথম প্রেম। নতুন ফুলগাছে আর কুঁড়ি খুঁজতে যাইনি। সেই মানসী বা ছোট্ট কুঁড়ি টুবাইকে অনেক কথা বলতে পারিনি।আকাশের রূপসী মেঘকে টুবাই ভেবে চুমু খেয়েছি।যদিও যৌবনকালে সে মায়াবী চোখ মেলে ধরেনি আমার চোখে।
এর পরেও এসেছে তৃণা কিংবা শমিতা। যারা নিজের সবটুকু দিতে চেয়েছে বিনামূল্যে। আমি অবশ্য তাদের তূলাদন্ডে চাপিয়ে প্রেমের বাটখারা দিয়ে মাপতে চাইনি। বরং সেই প্রেমের আপেক্ষিক তত্ত্ব মগজে পাক দিয়ে উঠতো। মাদকতার মোহে সব কিছু উপেক্ষা করে এবং সর্বস্ব পণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঝুঁকি অবধি নিতে পারিনি। বুঝিনি, আমার অঙ্কটাই কী ভুল,নাকি পদ্ধতিগত প্রকৃয়া? তাই প্রেম নিয়ে আর বোকা চালিয়াতি করিনি কখনও।কিন্তু বান্ধবী পরিবৃত থাকলে পাঁচটা ভদ্রলোক আমাকে বেঁকা চোখে দেখেছে। অনেক মহিলা সরাসরি বিবাহ প্রস্তাব দিলেও আমার মতো ছন্ন যুবকের প্রতি এই অহেতুক করুণা খুবই অস্বস্থিকর হয়ে উঠত। মনে হত এটা যেন অনর্জিত। নিতান্তই তুশ্চু।
তবু প্রেমঘন আবর্তন চলমান থাকে ক্লান্তিহীন ভাবে।প্রকৃতির নিয়মে পার্থিব অনুভূতিকে রসের বর্ষণে ঘুরিয়ে আনে বারেবারে। আমার প্রেম অকৃপণ হয়ে উজাড় করে দেয় বাতাস,জল,পাখির কলকাকলি আর পাতার মর্মর। প্রেমেই তো লুকিয়ে থাকে নিয়মের অনিয়মগুলো। বেদনাক্লিষ্ট মন ডুবে যায় বিরহ দর্শনে।এপারের বসন্ত আটকে থাকে ওপারে। যেন এক আত্মদর্শণ যার কোনও পূর্বাপর নেই।অনন্ত প্রেমপ্রবাহে জীবন বৈতরণী শুধু পেরিয়ে যেতে হয়।মনের আবেগে বা দেহের দাহে কখনও বা আশ্লিষ্ট হলেও প্রেম-রহস্যের অনেক অলিগলি জানা বাকি রয়ে গিয়েছিল। অসমাপ্ত প্রেমের স্মৃতিতে তন্ময় ও তৃপ্ত না থেকে একটাই মাত্র প্রেম-গন্তব্যকে তাই এখনও ধ্রুব করে নিতে পারলাম না।
(চলবে)