✒️কলমে: দুঃখানন্দ মণ্ডল
———————————————
ওরা ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠে ছাই দিয়ে দাঁত মাজতো। পরস্পর দাঁত দেখিয়ে বলতো দেখ আমার দাঁতগুলো কেমন চকচক করছে। ওরা তেরো পেরিয়েছে। কিন্তু ছোটবেলার কথা বেশ মনে আছে। বৃষ্টি নামতো গ্রামের মেঠোপথের আর অন্ধকার নিয়ে আসত অন্ধত্ব। বিদুৎ এর আলো ছিল না,ছিল লম্ফ আর লণ্ঠন। যেমন করে সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় আলো কমে আসে ঠিক তেমনি ভাবে দীর্ঘক্ষণ লণ্ঠনটি জ্বলার ফলে আবছা অন্ধকার নেমে আসত। খোলা জানালা দিয়ে বাতাস আসে আর ছুঁয়ে যায় মনে। বাতাসের সাথে ভেসে আসে তোর গায়ে গন্ধ। যে গন্ধ পূর্ব পরিচিত। আনমনা হয়েছে দৃষ্টি। তাকিয়ে দেখেছি জানালার দিকে! দাঁড়িয়ে আছিস জানালার পাশে। কড়াইতে ভাজা হচ্ছে বেগুনি। সেই প্রথম তোকে অনুভব করলাম। তেল ফুটছে বেগুনের গায়ে লেগে থাকা বেসনে পাক রং লাগছে। এ মা তুই তো ভিজে গেছিস! কিরে তুই এমনি ভাবে চলে এলি? এলাম তোর কি! তুই না একেবারে ভিজে গেছিস! তোকে শীত করছে না? কেন তোকে ঝাপটে ধরবো; উষ্ণতা নেওয়ার জন্য! ধরনা একবার। আমি তোর শরীরের গন্ধ নিই। কি ভালো লাগেরে। শালা দাঁড়া এই চুড়িদার টা খুলে দিচ্ছি! আমি সত্যি বলছিরে। এই নাও জামাটা ছেড়ে আসো। যা জামাটা ছেড়ে আয়। কিরে তোকে আলো দেখাতে হবে নাকি? না! বরঞ্চ একটু দাঁড়িয়ে যায়; আমার ভিজে যাওয়া জামাটা একটু তারে দিয়ে দিস। রাতে বাড়ি ফিরতে হবে। আচ্ছা আচ্ছা তুই আগে যা। আসলে একচিলতে ভালোবাসা। সুপ্ত প্রেম। মন থেকে, মনন থেকে উঠে আসে। যেমন করে অন্ধকারে তোকে চিনতে পারা বা তুই থেকে তুমি হওয়া। বা তুমি মৃণালিনী হয়ে বলবে; তোমাকে ধূসরতা মানায় না।
মন আনমনা বলেই হয়তো প্রেম চঞ্চলা! ঠিক ঐ ডালের পাখি এই ডালে। বা বান আসার মতো।মানে পুকুরের জলে আবদ্ধ থাকা মাছের ঝাঁক নদীতে আসার মতো। বুঝতে পারলেন না মানে মিষ্টি জলের স্বাদ। নতুন মুখ নতুন ক্লাস আর অবস্যই নতুন বান্ধবী। নতুন বান্ধবীদের খুব কাছাকাছি। একসময় খুব আপন হয়ে ওঠে কোনো একজন।খুব কাছের মানুষ,খুব কাছের আপনজন, মনের কথা শেষ বিকেলে।ফেরার তাড়া বাস স্টেজে। তবুও কথা বাকি থাকে। ভিড় বাস তবুও পাশাপাশি। সময় শেষ স্টেজে বাস আসার আগে নামার প্রস্তুতি আর হেলপার বাজিয়ে দেয় হর্ণ সজাগ হয়ে যান ড্রাইভার। শরীর ছুঁয়ে যায় মনের কথায়, থেকে যায় তোমার শরীরি গন্ধ। যেন একটু অক্সিজেন রেখে যাওয়া। নাকের মধ্যে এখনো মক মক করছে প্রিয় মানুষটির ঘাম আর ডিওডিনের গন্ধ। একটি সংমিশ্রণ, একটা ভালবাসা, একটি প্রেমের প্রথম কথা। চোখে ঘুম আসে না! কেন আসে না তার উত্তর নেই রাত্রির কাছে। একসময় বান্ধবী তুই হাসনুহানা হয়ে ভোরের পাখি হয়েছিস। চোখে ঘুম, মাথা ধরে থাকা তবুও মন পড়ে আছে শেষ স্পর্শের দাগে।
কেমন একটা সময় ছিল! তোদের কাছে নতুন কেউ আর আমাদের কাছে অন্য কেউ। আসলে সবাই কৃষ্ণ রাধা হতে চায়। আরে পাগলা ওরা তো দেবতা ছিল। ওদেরকে অনুসরণ করতে হয়, অনুকরণ না। মানে ওরা কি করতে বলছে সেটাই করতে হয়! এইতো এখন তোমরা ভেবে নিলে কুন্তীর বিয়ের আগে কর্ণ যদি আসতে পারে তাহলে আমাদের অপরাধ কোথায়! তোমরা এটা জানলে না কুন্তী যে সূর্যের কাছে বর পেয়েছি। ভেবে নিলে গোপনো কথাটি রবে না গোপনে। আর এই জন্যই ভেঙে যায় মন। আবার বলছো কি? রবি কি কম প্রেম করেছে। বুঝতে দেয়নি মৃণালিনীকে। শুধু আঁচ করতো ঠাকুর মনে হয় অন্যের সাথে আছে! কি এসে যায়। ঠাকুর ঠিক মেনেজ করে নিতো। কিন্তু তুমি পারো না। আমি বলি কি; তুমি একবার ফিরে যাও সেই প্রথম বান্ধবীর কাছে। যার শরীর থেকে প্রথম সুগন্ধী প্রেম নিয়েছিলে। সে কিন্তু এখনো তোমার কথা ভাবে, গভীর রাতে জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। তুমি একবার চোখ বন্ধ করো! দেখতে পেলে তার প্রতিচ্ছবি! নিঃস্তব্ধতা নিয়ে সে এখনো অপেক্ষা করছে। আসলে সেটাই ছিল তোমার প্রথম প্রেম। বাকিগুলো নারী-পুরুষের ইচ্ছা শক্তি। মানে সুগন্ধি নেওয়া নতুন শরীরের। ঠিক পুকুরে মিষ্টি জল ঢোকার মতো।