✍️কলমে আশিস মিশ্র
( পর্ব -৯)
সেই রবিবারের বিকেল কেমন করে কাটবে,ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে পড়লাম। ভীষ্মদার চায়ের দোকানে বসবার কিছুক্ষণ পরেই তুমুল বৃষ্টি এলো। আমরা কয়েকজন বন্ধু এমন বৃষ্টি দেখার পর বেশ মজা করে বললাম, আজ কি ওয়েদার? একজন বললো, আবগারি ওয়েদার। তাহলে হয়ে যাক গুরু।
মুহূর্তে চাঁদা উঠতে শুরু করলো। তার মধ্যে ছাতা মাথায় একজন বেরিয়ে গেল।
তাহলে এখন বৃষ্টি হলে তা হয়ে যায় আবগারি ওয়েদার। সত্যি কি ওয়েদারের বদল ঘটলো? নাকি বাঙালি তার মগজে ওয়েদারকে বদলে দেওয়ার জন্য একটি নতুন ডিসকোর্সের জন্ম দিয়েছে? এখন প্রশ্ন, কোন শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি মদ্যপান জনিত ট্যাক্স সরকারকে দিচ্ছে? সব বিত্তবান নিশ্চয় নয়। তাহলে তারা কারা? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর আছে, তা একটু আশেপাশে চোখ ফেললেই পাওয়া যাবে।
এই সব ভাবনার মধ্যে রেনড্যান্স চলছে। তখনই নুটুদার প্রবেশ। নুটুদা আমাদের বন্ধু কাম দাদা। তিনি যেমন স্নেহ করেন,তেমনি আসরও জমিয়ে দেন। শিক্ষিত ব্যাচেলর। বিয়েথা করেননি। টিউশন করেন।
আর নাকি লিভটুগেদার করবার একটি সুপ্ত বাসনা আছে। তা কবে থেকে হবে কেউ জানি না। তিনি প্রবেশমাত্র দুপ্রস্ত খিস্তি চলবে। তারপর ভীষ্মদাকে বলবেন, এই ঢ্যামনা গুলোকে আবার চা দাও। শালারা সব কোবতে লিখতে শুরু করেছে। উচ্ছন্নে যাওয়ার সময় এসেছে এদের।
আমি বললাম, এতো উত্তেজিত না হয়ে, শোনো না। আজ একটা টাটকা মাল নামিয়েছি। শুনবে? নুটুদা বললো,বল। শুনি।
” কামবর্ধক ঔষদ প্রয়োগ হেতু
পোকা আর পোকি বাঁধিয়াছে এক সেতু।”
সবাই ওয়া,ওয়া করে উঠলো। চা এলো আবার। নুটুদা বললো, এ তো একেবারে টাটকা মাল। “দেশ” বা
” কৃত্তিবাসে” পাঠিয়ে দে।
আমি বললাম, তাহলে আর একটা শোনো।
” দেহ আছে মন নেই, মন আছে দেহ নেই ধুস্
চোঁচা মেরে উড়ে গিয়ে ফেটে যায় বেলুনেরা ফুস্।”
আবার ওয়া ওয়া করে উঠলো বন্ধুরা। নুটদা বললো, আবগারি ওয়েদারের জন্য তোর এই টাটকা মালের উপকারীতা আছে প্রবল।
সবাই হো হো করে উঠলো। বৃষ্টির নাচন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা একে একে একটি ঘরে ঢুকে পড়লাম।
নুটদা বললো, অর্থ, খ্যাতি আর যশ সকলের হয় না। ওসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তোরা তোদের কাজ করে যা। শুধু ভাবি,তোদের মতো মাস্টার ডিগ্রি করা, বিএড করা ছোকরাগুলোর কী হবে। শেষপর্যন্ত কি চপ- মুড়ি ভেজে প্রাণ বাঁচাবি? নাকি মাথার চুল ছিঁড়ে রোমান্টিক কবিতা লিখবি। সহ্য করা ও অপেক্ষারও তো সীমা আছে। তা পেরিয়ে গেলে এই যুবসম্প্রদায় অনেক কিছু করতে পারে। সেইটা দেখতে পাচ্ছি। দে শালা,আজ দু’চুমুক গলায় ঢেলে যাই। শালা কিছুই আর ভাল্লাগে না মাঝে মাঝে…
(চলবে)