নিজস্ব সংবাদদাতা, গোয়ালতোড় : বিঘা ১৫ চাষের জমি। ধান চাষের পাশাপাশি আলু আর লাভজনক সবজি চাষ করে থাকেন। বাড়িতে গরু আছে গোটা কুড়ি, আছে ছাগল। দুধ ঘি খাওয়া গায়ে গতরে বেড়ে ওঠা সম্পন্ন চাষি পরিবার। রোজভ্যালি নামক চিট ফান্ডের এজেন্ট হয়ে সাধারন গরিব মানুষের টাকা হাতিয়েও লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক কিন্তু তাতেও বেজায় গরিব, দুঃস্থ বিজেপি নেতা তপন মাল পেয়েছেন আমফানের ক্ষতিপূরনের টাকা।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দ্বিতীয় দফায় আম্ফানের ক্ষতিপূরনের পাওয়া ব্যক্তিদের নাম। আর সেই তালিকায় ৬৩০ নম্বরের জ্বল জ্বল করছে ওই বিজেপি নেতার নাম। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুধু বিজেপি নেতা হওয়ার সুবাদেই আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দোতলা প্রাসাদের মালিক তপন মাল৷ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড় থানার ধরমপুর গ্রামের এই নেতার কাহিনী এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্দিত।
এমনই তে আমফানের ‘ফ’ দেখেনি গোয়ালতোড়। তবুও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া কেন্দ্রীয় বরাদ্দ যদি দিতেই হত তবে তার জন্য এই জঙ্গলমহলে হত দরিদ্র মানুষের অভাব নেই। জঙ্গলের পাতা কাঠ কুড়িয়ে জীবন যাপন করে কোনোও মতে কুঁড়ে ঘরে মাথা গুঁজে থাকা মানুষের সংখ্যা গোয়ালতোড় এলাকার মোট পরিবার সংখ্যার অর্ধেক হবে তার চেয়ে বেশি হতে পারে কম নয়। কিন্তু সেই সব মানুষদের অনেকেরই ভাগ্যে জোটেনি এই টাকা। অবশ্য শুধু গোয়ালতোড় নয় সারা রাজ্যের চিত্রটাই প্রায় একই রকম।
প্রথম দফার ক্ষতিপূরণের বরাদ্দ টাকা নিয়ে উত্তাল হয়েছে রাজ্য। বিজেপির রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, কেন্দ্রের টাকা মেরে খাচ্ছে তৃণমূলের নেতা নেত্রী আর তাদের ভাইপো ভাগ্নের দল। অভিযোগও অনেকাংশেই সত্যি,দক্ষিণ ২৪পরগনা থেকে নন্দীগ্রাম, তৃনমূল নেতা নেত্রীদের লুট প্রকাশ্যে এসেওছে। কিন্তু ক্ষমতায় আসলে দিলীপ ঘোষের দল যে তারচেয়ে কম কিছু হবেনা তাও প্রমানিত হয়েছে। যেমনটা হল গোয়ালতোড়ে। ধরমপুর এলাকা পিংবনী গ্রামপঞ্চায়েতের অধীনে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের লুট তরাজে তিক্ত বিরক্ত মানুষ ক্ষমতায় এনেছে বিজেপিকে। কিন্তু মানুষের অভিজ্ঞতা যে ভাল নয় তা আবারও দেখা গেল এই ঘটনায়।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ ওই বিজেপি নেতার রয়েছে দোতলা পাকা বাড়ি। এমন কি তার গোয়ালঘর টিও পাকার। সেই লোকটি কিভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা পাই? অথচ গ্রামের এমন অনেকেই আছেন যারা মাটির ভাঙ্গা বাড়িতে কিম্বা কুঁডে ঘরে রয়েছেন, অনেকের ঘরের ক্ষতি হলেও তারা আবেদন করেও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি।গ্রামবাসীদের বক্তব্য বিডিও মারফৎ প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত দের তালিকা করা হয়েছে তারপরেও কিভাবে এই রকম দুর্নীতি হয়?
তাদের দাবী অবিলম্বে ওই বিজেপি নেতার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা প্রশাসনিক ভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাবস্থা করা হোক। আর না হলে গ্রামের প্রকৃতই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অথচ তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তাদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাবস্থা করুক প্রশাসন। পিংবনী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ মাহাত বলেন, ‘উনি কী ভাবে টাকা পেয়েছেন জানিনা। গ্রামপঞ্চায়েত থেকে ওনার নাম পাঠানো হয়নি। আমফানের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপশি সিভিক ভলান্টিয়ার, পঞ্চায়েত সমিতি ও বিডিও তৈরি করেন।”
গ্রামবাসীদের বক্তব্য তালিকা যারাই তৈরি করুন তারা যে কী তালিকা তৈরি করছেন আর কাদের তালিকা তৈরি করছেন তা এই ঘটনায় পরিষ্কার। তালিকা তৈরি বাবদ এবং তালিকা তৈরির আগে পরিদর্শন করা বাবদ কিছু কী তবে মূল্য ধরে দিতে হয়? না হলে বারবার ভুল করে কেন শুধু নেতাদেরই নাম তালিকায় উঠে যায়। ধরমপুর গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, “চক্ষু লজ্জার খাতিরে অনেকে ভাঙা গোয়ালঘরকেই নিজের ঘর বলে দেখিয়ে টাকা নিয়ে নিয়েছেন কিন্তু এই মানুষটার গোয়ালঘরটাও যে পাকা! তাহলে কি অন্যের কুঁড়ে ঘর কে নিজের ঘর বলে চালিয়ে দিয়েছেন?”