অশ্লেষা চৌধুরী: বর্তমান যুগে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী যদি কেউ হয়ে থাকে, তাহলে সেটি হল আমাদের হাতে থাকা ঐ মুঠোফোনটি। সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে একদিন কথা না বলেও চলবে, কিন্তু এটিকে এক পলকের জন্যও হাতছাড়া করা কঠিন। গান শোনা, চ্যাটিং, একটু পরপর ফেসবুকের নোটিফিকেশনের শব্দ তো আছে, বন্ধুরা কে কোন ছবিতে লাইক দিয়েছেন তা জানার জন্যই স্মার্টফোন থেকে এক সেকেন্ড দূরে যেতেও চান না কেউ। আবার এমন অনেকেই আছেন, কাজ সামলাবেন না মুঠোফোন সামলাবেন তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যান। আর করোনার সুবাদে তো এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম ও অনলাইনেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে মুঠোফোনে এই আসক্তির কারণে হাজারও বিপদের মুখে পড়তে হয় অনেককেই। তাই কাজের জন্য যতই প্রয়োজন হোক, তবুও মুঠোফোন থেকে কিছুটা আসক্তি কমিয়ে ফেলা কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। তবে কীভাবে? এই ব্যস্ততম দিনে, সবচেয়ে কাজের জিনিসটিকে দূরে রাখা কী আদৌ সম্ভব! পুরোটা না হলেও কিছুটা সম্ভব, আর নিজের ও পরিবারের ভালর জন্য এটুকু চেষ্টা করা যেতেই পারে। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে তেমনই কিছু উপায়, যা মুঠোফোনে আসক্তি কমাতে সহায়তা করবে, দেখে নিন-
স্মার্টফোনে আসক্তি কমাতে যা করবেন
সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গিয়েছে, ৬০%-র বেশি মানুষ ঘুম থেকে উঠেই চোখ রাখেন মুঠোফোনে। এই অভ্যাস কাটিয়ে উঠতে প্রতিদিন সকালে সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস ও রাতে বই পড়ার অভ্যাস করুন। আর রাতে ঘুমানোর সময় মাথার পাশে মুঠোফোন নিয়ে ঘুমাবেন না। এতে করে যেমন ফোনের রেডিয়েশনের হাত থেকে বাঁচবেন, তেমনই ঘুম থেকে উঠেই স্মার্টফোনে চোখ রাখার অভ্যাসও কমবে।
মুঠোফোনে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রেখে দিতে পারেন। তবে একান্তই যদি তা সম্ভব না হয়, তবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির সেটিংস অপশন থেকে নোটিফিকেশন বার্তা কমিয়ে নিতে পারেন।
কোনেও মিটিং কিংবা ক্লাসে মুঠোফোন বন্ধ করে নির্দিষ্ট সুরক্ষিত স্থানে রেখে আসুন। মিসড কল অ্যালার্ট সার্ভিসের মাধ্যমে ফোন বন্ধ রাখার সময় কে কে ফোন করেছিলেন তা জানতে পারেন। অফ না করলেও সাইলেন্ট মোডে রাখতে পারেন।
সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় না করে সরাসরি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, কথা বলুন চোখে চোখ রেখে। নিজের ব্যস্ত সময় তালিকা থেকে কিছুটা সময় সপ্তাহান্তে বের করার চেষ্টা করেই দেখুন না একবার।
দৈনন্দিন কাজের হিসাব, মিটিং ইত্যাদি লিপিবদ্ধের জন্য মুঠোফোনের নোটপ্যাডের বদলে ডায়েরিতে হাতে-কলমে লেখার অভ্যাস করুন। অবসর সময় কাটাতে ফোনের বদলে বইয়ের পাতাতেও চোখ বোলাতে পারেন কিছুক্ষনের জন্য। আবার কাজের ক্ষেত্রেও মুঠোফোনে ই-মেইলের উত্তর দেওয়ার বদলে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহারের অভ্যাস করতে পারেন।
বেশিরভার আজকের প্রজন্মের বাবা-মা, সন্তানের কান্না বা জেদের কারণে খুব তাড়াতাড়ি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন এবং তাদের শান্ত রাখতে হাতে তুলে দেন মুঠোফোন, যেটা প্রকারন্তরে তাদের বিপদ বাড়ায় বৈ কমায় না। এক্ষেত্রে আপনি তাদের অন্য কিছু খেলার সামগ্রীও দিতে পারেন। আর সন্তান যদি কিছুটা বড়হয় তবে তাদের হাতে বই-খাতা তুলে দিন, রঙিন পেনসিল তুলে দিন, তাদের ছোট ছোট ভাবনা গুলি বিকশিত করার সুযোগ পাবে তারা এতে। আর মুঠোফোনের আসক্তিও ঘিরে ধরবে না তাদের।
সামাজিক অনুষ্ঠান গিয়ে আজকের দিনে কেউ সেলফি তোলেন না, এমনও মানুষের সন্ধান খুব কম মেলে। তবে সেটাও একটা নির্দিষ্ট সীমা মেনেই করা সমিচীন। অনুষ্ঠান বাড়ীতে গিয়ে মুঠোফোনটিকে সময় না দিয়ে পরিচিতদের সময় দিন। এতে করে ফোনের আসক্তি কমার পাশাপাশি পরিচিতদের সাথে বন্ধন সুদৃঢ় হবে।
আরও একটি অভ্যাস যা প্রায় আমাদের সকলের মধ্যেই দেখা যায়, তা হল খাওয়ার সময়েও মুঠোফোনে চোখ বোলানো। এতে করে ক্ষতি কিন্তু আঝেরে আপনারই। খাওয়ার সময় ফোনে চোখ রাখলে খাওয়ার প্রতি ঠিক ভাবে ধ্যান দেওয়া হয় না, এতে করে লালা নিঃসরনে ঘাটতি দেখা যায়, হা পরবর্তীতে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। আর তাড়াহুড়োতে হয়তো খাওয়াটাও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই খাওয়ার সময় কিছুক্ষণের জন্য মুঠোফোনটি না হয় চোখের আড়ালেই রাখুন।
উল্লেখিত কথা গুলি মেনে চলা হয়তো খুবই কঠিন, কারণ ব্যস্ততম দিনে যে মাধ্যমটির সয়ায়তায় আমদের বেশীরভাগ কাজ পূরন হয়, সেটিকে দূরে রাখা সত্যিই কঠিন। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে আমাদের একটু হলেও চেষ্টা করা উচিৎ। কারণ ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দেখেছেন, মুঠোফোনে আসক্ত ব্যক্তিদের উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও নানান গবেষনায় মুঠোফোনের এই ক্ষতিকর প্রভাবগুলি উঠে এসেছে বারবার। তাই সময় এসেছে কিছুটা হলেও সচেতন হওয়ার।